অর্থনীতি

উড়ছে ব্রয়লার মুরগি, কেজি ২৬০!

দুই মাস আগেও ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। সেই মুরগির রেকর্ড দাম বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। সোনালি মুরগির দামও কেজি ৩৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে দেশি মুরগিও। বিক্রেতারা বলছেন, এর আগে কখনোই তাঁরা ২৬০ টাকা কেজিতে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেননি। মূলত বাজারে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই রেকর্ড দাম সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও রামপুরা বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, দুই দিনের ব্যবধানে মুরগির দাম আরেক দফা বাড়ল। দুই দিন আগে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। নতুন করে আরেক দফা দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি। দুই দিন আগে সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৩৩০ টাকা থেকে ৩৪০ টাকায়। দেশি মুরগির দাম কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৬০ টাকায়। তবে বাজারে ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফার্মের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা।

বাজারে নতুন রসুন আসতে শুরু করায় সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে দেশি ও আমদানি করা রসুনের দাম। দাম কমে বর্তমানে বাজারে আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, আর দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা।

চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে মোটা চাল ব্রি-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি, চিকন চাল (মিনিকেট) বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি আর নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি।

মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পোলট্রি খাদ্য, বাচ্চা, ওষুধের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়েছে। এসব কারণে খামারিরা বর্তমানে শেডে মুরগির বাচ্চা তুলছেন না। খামারিরা বলছেন, যে টাকা তাঁরা খামারে মুরগির পেছনে ব্যয় করবেন, বাজার পড়তির দিকে গেলে সেই টাকা আর উঠে আসবে না। যে কারণে বাজারে ব্রয়লার মুরগির এক ধরনের সংকট তৈরি হয়ে দাম বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন গতকাল বলেন, ‘ব্রয়লার মুরগির দাম আরেক দফা বাড়ল। দাম বাড়ার কারণে আজ (গতকাল) আমরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। সোনালি মুরগি কেজি ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকা, আর দেশি মুরগি ৫৬০ টাকা কেজি।’

তিনি বলেন, ‘বাজারে মুরগির সরবরাহ কম। আর পোলট্রি খাদ্যের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় অনেক খামারি মুরগি তোলেননি। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে এখন ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে বেশি দামে বিক্রি করেও আমরা কিন্তু লাভ করতে পারছি না। ক্রেতা ধরে রাখতেই লাভ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করছি।’

রামপুরা বাজারের বিসমিল্লাহ ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন গতকাল বলেন, ‘বাজারে বয়লার মুরগির ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যে কারণে চাহিদা মতো আমরা ব্রয়লার মুরগি পাচ্ছি না। যেটুকু পাচ্ছি বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে।’ দাম বাড়ার কারণে বিক্রি কমে গেছে বলে জানালেন এই ব্যবসায়ী।

রামপুরা বাজারে গতকাল কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. আবু রায়হানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গরুর মাংস আমার পছন্দ। একসময় গরুর মাংস ছাড়া অন্য মাংস তেমন কেনা হতো না। গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় সোনালি মুরগি খাওয়া শুরু করলাম। সেটি ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে ব্রয়লার মুরগি খেতে শুরু করি। এখন ব্রয়লার মুরগির দামও নাগালের বাইরে চলে গেছে। ইচ্ছা থাকলেও এখন আর আগের মতো সপ্তাহে এক দিন মাংস খাওয়া হবে না।’

কামরুল হাসান নামের একজন ক্রেতা গতকাল জানান, ব্রয়লার মুরগির রেকর্ড দাম বাড়ায় গতকাল রাজধানীর এজিবি কলোনির কাঁচাবাজারে একটি মুরগির দোকানে মাংস কেটে পিস হিসেবে বিক্রি করা হয়। উপায় না থাকায় ক্রেতারা তা কিনছিলেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের গাজীপুরের শ্রীপুর শাখার সভাপতি এম এ মতিন বলেন, ‘পোলট্রি খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সাহস করে কেউ নতুন করে মুরগি তুলতে চাচ্ছেন না। যে কারণে রাজধানীর বাজারে মুরগির সরবরাহ কমে যাচ্ছে। সামনে আরো কমে যাবে। এক বছর আগে প্রতি কেজি পোলট্রি খাদ্যের দাম ছিল ২২ থেকে ২৩ টাকা, সেটি এখন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়। যে কারণে মুরগির দাম বেড়েছে। এবার রমজানে বাজারে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কী পরিমাণ থাকবে তা এখনই বোঝা যাচ্ছে। কারণ খামারিদের কাছে বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি খুবই কম রয়েছে।’

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker