ক্রিকেট

সাকিবের নিয়ম ভাঙার নিয়মে অসহায় বিসিবি

গোটা বাংলাদেশ যা জানে, তা জানেন না নাজমুল হাসান! এক পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের জুয়েলারি শপ উদ্বোধনে দুবাই গিয়ে সাকিব আল হাসান নতুন এক বিতর্কের জ্বালামুখ খুলে দিলেও তা নিয়ে অন্ধকারে থাকার দাবি বিসিবি সভাপতির। বৃহস্পতিবার রাতের এক অনুষ্ঠানে সংবাদমাধ্যমকে এই ক্রিকেট প্রশাসক বলেছেন, ‘আমি জানি না। আমি জানি না সে কোথায় গেছে।’

আইসিসির সভায় যোগ দিতে নাজমুল নিজেও এরপর দুবাই গেছেন। এটিও বোধগম্য যে যাওয়ার আগে তারকা অলরাউন্ডারের সর্বসাম্প্রতিক কাণ্ডের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টাই করেছেন তিনি। সেই চেষ্টা এবার সঞ্চারিত বিসিবিতে তাঁর সহকর্মীদের মধ্যেও। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সরাসরি অভিভাবক সংস্থার ক্রিকেট অপারেশনস কমিটি। সাকিবের দুবাই যাওয়া নিয়ে সেই কমিটির প্রধান জালাল ইউনুসও ধরলেন একই পথ, ‘সভাপতি সাহেব তো এটি নিয়ে যা বলার বলেই দিয়েছেন।’

আরো পড়ুন: চিত্রনায়িকা মাহি গ্রেফতার

কিন্তু তিনি তো বলেছেন যে কিছুই জানেন না! এবার জালালের জবাব, ‘হ্যাঁ, ওটাই। আমরাও কিছু জানি না।’ সাকিবকে সামলানোর দায়িত্ব যাঁদের, তাঁদের এমন বক্তব্যে বিস্ময়ের চেয়ে অসহায়ত্বই যেন বেশি। নিয়ম ভাঙার অঘোষিত এক নিয়মই করে ফেলেছেন এই অলরাউন্ডার। নিত্যনতুন বিতর্কে খবরের শিরোনাম হচ্ছেন। কখনো কখনো বিসিবিও কঠোর হওয়ার চেষ্টা করেছে। দলে না রাখার হুমকি দিয়ে বেটিং সাইটের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি থেকে বের করে আনার সাফল্য যেমন আছে, তেমনি ছাড় দিয়ে নানা বিতর্কের ডালপালা মেলতে দেওয়ার ব্যর্থতাও কম নেই তাদের।

আরও পড়ুন: অটোবাইক চালক হত্যার প্রধান আসামী আটক: ছিনতাইকৃত অটোবাইক উদ্ধার

এই ব্যর্থতায় যোগ আছে পারফরমার সাকিবেরও। জুয়াড়ির সঙ্গে যোগাযোগের খবর গোপন করে পাওয়া আইসিসির নিষেধাজ্ঞা শেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই প্রথম সিরিজে মাত করে দিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন খেলায় ছিলেন না; কিন্তু মাঠে এর কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হওয়া সাকিব এর পর থেকে বেশির ভাগ সময়ই ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল। যে কারণে তাঁকে নেতৃত্বে ফেরাতেও দ্বিধা করেনি বিসিবি। ফেরার পর নিষিদ্ধ হওয়া ক্রিকেটারকে অধিনায়ক করার রেওয়াজ অন্য কোথাও না থাকলেও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসন হাঁটে উল্টো পথে। একে একে তাঁকে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্বেও ফিরিয়ে আনা হয়। বিসিবির অবস্থা তাই অনেকটা সেই খামারির মতো, দুধ দেওয়া গরুর লাথি-গুঁতা হজমেও যার আপত্তি নেই!

এবার দুবাইয়ে পলাতক আসামির দোকানের উদ্বোধনীতে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে তোলপাড়ের পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীও এই অলরাউন্ডারকে তলব করতে পারে। ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ এরই মধ্যে জানিয়েছেন যে তদন্তের প্রয়োজনে সাকিবকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হতে পারে। এর পরও কি বিসিবি বলবে যে তারা কিছু জানে না? এই প্রশ্নে ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির প্রধান ‘ডাক’ করলেন এভাবে, ‘আমি এই বিষয়ে কোনো কথাই বলতে চাচ্ছি না।’ কেন চাচ্ছেন না? এর জবাবে একটু মুখ খুললেন জালাল, ‘আসলে পুরো বিষয়টি না জেনে আমরা কিছু বলতে চাই না। এখন পর্যন্ত যা জানার, মিডিয়া থেকেই জেনেছি। সাকিবের সঙ্গে এখনো এটি নিয়ে কথা হয়নি। বিসিবি সভাপতিও এখন দুবাইয়ে আছেন। তিনি ফিরলে আমরা সাকিবকে ডেকে বসব। পুরো জেনেই এ বিষয়ে আমরা কথা বলতে চাই।’

আরো পড়ুন: আরাভ খানকে আমি চিনি না : বেনজীর আহমেদ

তদন্তের প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদের খবরে বিষয়টি যে বিসিবির জন্য আরো স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে, সেটিও স্পষ্ট জালালের বক্তব্যে, ‘মিডিয়ায় দেখেছি, পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন। এখানে যেহেতু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যাপারও চলে এসেছে, তাই পুরোটা না জেনে আমাদের বিক্ষিপ্তভাবে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আগে সভাপতি সাহেব ফিরে আসুন, এরপর আমরা পুরোটা জেনে-বুঝে কথা বলব।’ পলাতক আসামির আয়োজনে দুবাই চলে যাওয়ার বিষয়টি না হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী পর্যন্ত চলে গেছে। তবে দলের ভেতরই নানা অনিয়ম করে পার পেয়ে যাওয়া সাকিবকে ঠেকানোর দায়িত্ব তো বিসিবিরই। সেখানেও কি কঠোর হতে পারছে তারা?

গত কিছুদিনে একদমই না। ইদানীং দলের সঙ্গে যোগ দিতেও বিলম্ব তাঁর। দুবাই থেকে ফেরার পর বৃহস্পতিবার রাতেও এক অনুষ্ঠানে দেখা গেছে তাঁকে। এ কারণেই গতকাল সকালের ফ্লাইটে সিলেটে এসেছেন, সকাল ১০টায় শুরু হওয়া অনুশীলনেও যোগ দিয়েছেন। দল অবশ্য আরো আগেই চলে এসেছে। ঢাকায় ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ মিশনের আগের দিনও ব্যক্তিগত কাজে নিজের শহর মাগুরায় গিয়েছিলেন সাকিব, তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন দুই সতীর্থ তাসকিন আহমেদ এবং নুরুল হাসান সোহানও। সিরিজ চলাকালীন এ রকম কর্মকাণ্ড যে দলীয় সংস্কৃতির জন্য ভালো নয়, তা অবশ্য মানলেন জালাল, ‘ভালো নয় অবশ্যই, লক্ষণীয়ও। ইদানীং এগুলো একটু বেশিই হচ্ছে বোধ হয়।’

সাকিব পারফরমার বলেই এসব ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেও দেখা হয়। দুবাইয়ের ঘটনায় অবশ্য বল তাঁদের সীমানা পেরিয়ে এখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কোর্টেও। যা আরো বিব্রতকর হওয়ায় বিসিবি আপাতত ‘নো কমেন্টস’-এর ছাতার আড়ালে!

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button