বিবিধ

ছবি তুলেছি ভিডিও করেছি বই কিনিনি

অমর একুশে বইমেলায় এসেছেন তিন বান্ধবী। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মেলাপ্রাঙ্গণে আসেন। ঘুরেফিরে তারা প্রায় তিন ঘণ্টা সময় পার করেছেন। মুঠোফোনে ছবি তুলেছেন, ভিডিও করেছেন। তিনজনের কেউই কোনো বই কেনেননি। একেবারে ‘শূন্য হাতে’ বইমেলা থেকে ফিরেছেন এ তরুণীরা।

তাদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। মেলায় কেন এসেছিলেন, জানতে চাইলে তরুণীদের সরল স্বীকারোক্তি- ‘ছবি তুলতে, ভিডিও করতে এসেছিলাম। ছবি-ভিডিও নেওয়া শেষ, এখন বাসায় ফিরছি। বই কেনা হয়নি।’

তিন তরুণীর একজন সাফিয়া ইবনে তাবাসসুম। তিনি বলেন, ‘তিনজন একসঙ্গে কিছু ছবি তুলেছি। আবার আলাদা কিছু ছবিও তুলেছি। টিকটকের জন্য কিছু ভিডিও করেছি। এখন চলে যাচ্ছি। বাসায় গিয়ে বিভিন্ন গানের সঙ্গে ম্যাচিং করে টিকটকে ভিডিওগুলো দেবো।’

মেলায় আসা হৃদয় হাসান নামে এক যুবক জাগো নিউজকে বলেন, ‘টিকটকের জন্য কিছু ভিডিও তৈরি করেছি। শুনেছি, বইমেলার টিকিটকের ভিডিও ভালো ভিউ হয়।’

শুধু তাবাসসুম, তার দুই বান্ধবী ও হৃদয় হাসান নন, অমর একুশে বইমেলায় আসা অধিকাংশ দর্শনার্থী ব্যস্ত সেলফি, টিকটক ও ভিডিওধারণে। বই খুলে দেখা দূরে থাকা, অনেকে স্টলেও যান না। সেখানে কেনার তো প্রশ্নই আসে না।

বইমেলা বাঙালির আবেগের প্রতিচ্ছবি। থাকে অনেক প্রত্যাশাও। নতুন বছরে নতুন বইয়ের গন্ধে মাতবে, বই কিনে আলমারি ভরবে, আরও কত কী চিন্তা! প্রকাশনাগুলোও পুরো উদ্যমে বইয়ের জোগান দেয়। স্টলে স্টলে কর্মীরা হাসিমুখ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন ক্রেতাদের জন্য। ক্রেতারা স্টলে আসবেন, বই হাতে নিয়ে খুলে দেখবেন, পড়বেন। পছন্দের এক বা একাধিক বই কিনে নিয়ে যাবেন।

অথচ মেলায় ঘুরে বেশ কিছু স্টলে গিয়ে দেখা গেছে তার উল্টোচিত্র। মেলায় আসাদের সংখ্যা অনেক। তবে বই কেনায় আগ্রহী খুব কম মানুষ। বই কেনা মুখ্য নয়। বরং অবসর সময় কাটানো, ছবি কিংবা ভিডিও করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।

তবে ক্রেতা যে নেই, তা নয়। সংখ্যাটা কেবল কমছেই। আক্ষেপের সুর স্টলে থাকা কর্মীদের কণ্ঠে। ‘অনিন্দ্য প্রকাশ’-এর স্টলে থাকা একজন কর্মী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বই পড়তে যারা সত্যিই আগ্রহী, তারা ঠিকই বই কেনেন। তবে সত্যিকারের ক্রেতার সংখ্যাটা দিনে দিনে কমছেই।’

অনেকের ধারণা, বইয়ের দাম তুলনামূলক বেশি। সেজন্য ক্রেতা কমছে। তবে জনপ্রিয় স্টলগুলোতে কিছুটা ভিড় আছে। মেলার বাকি অংশে তেমন ভিড় চোখে পড়ছে না। বেশিরভাগ দর্শনার্থীর আকর্ষণ কারুকার্যময় স্টলগুলোতে, তা শুধু ছবি-ভিডিও করার জন্য।

নাজনীন ফেরদৌস নামে একজন লেখকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তার ফেসবুকে ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় হাজারের বেশি। ফেসবুকে ঢুকলেই দেখা যায়, মানুষ বইমেলায় যাচ্ছেন, ছবি তুলছেন। তারা বই কিনে ছবি তুলে ফেসবুকে দিচ্ছেন। লিখছেন, আজ এতগুলো বই কিনেছি।

রাফিয়া জান্নাত নামের ২৫ বছর বয়সী এক তরুণী হাস্যজ্জল চেহারায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা আটজন বন্ধু বইমেলায় এসেছি। অনেক ঘুরে এখন ক্লান্ত। বইমেলায় এসে আমরা প্রায় ৫০টিরও বেশি ছবি তুলেছি। কিছু ছবি এরইমধ্যে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে আপলোড দেওয়া হয়েছে।’

পরিবারসহ বইমেলায় এসেছেন আব্দুল্লাহ আল রাজীব। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মেলায় এসে বই কেনার চেয়ে বইসহ ছবি তোলা কিংবা জনপ্রিয় লেখকদের সঙ্গে সেলফিই মূল উদ্দেশ্য দেখছি। এমন কালচার (সংস্কৃতি) থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রাণের মেলায় এসে অন্তত একটি বই কিনলেও তা সার্থক হবে।’

রাকিব হাসান জয় নামের একজন তরুণ এসেছেন ১০ বন্ধুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ছুটির দিনে বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগছিল না। তাই বন্ধুদের সঙ্গে প্ল্যান করে চলে এলাম বইমেলায়। বই কেনার উদ্দেশ্য মূল না হলেও ঘুরতে বেরিয়েছি আজ। ছবি তুলবো, দুপুরে একসঙ্গে বন্ধুরা খাবো, আড্ডা দেবো।’

অন্যদিকে কিছু দর্শনার্থীকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লেকের পাশে বসে আড্ডা দিতে দেখা যায়। একদল তরুণ গিটারের তালে সমস্বরে গেয়ে যাচ্ছেন, ফাগুনেরও মোহনায় গানটি। কেউ কেউ আবার মেলায় বসা খাবারের স্টলে গিয়ে ভুঁড়িভোজে ব্যস্ত।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker