জাতীয়

জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধিবদ্ধ নিয়ম

একটি দেশের স্বাধীন সার্বভৌমত্বের প্রতীক হচ্ছে পতাকা। আর এ পতাকা একটি দেশ তথা রাষ্ট্রের পরিচয় বহন করে। আমাদের দেশের জাতীয় পতাকা সবুজের বুকে লাল বৃত্ত খচিত। তবে এ পতাকাকে উত্তোলন কিংবা সঠিকভাবে- সঠিক মাপে তৈরি করারও রয়েছে বিধিবদ্ধ নিয়ম।

জাতীয় পতাকার সঠিক মাপ এবং ব্যবহারের নিয়ম

  • বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গাঢ় সবুজ বর্ণের আয়তক্ষেত্রের মাঝখানে একটা ভরাট রক্তিম বৃত্ত দিয়ে তৈরি। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬। পতাকার মাঝখানের লাল বৃত্তটির ব্যাসার্ধ হবে পতাকার দৈর্ঘ্যের ৫ ভাগের একভাগ।
  • পতাকা টানানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে এর মান ক্ষুন্ন না হয়।
  • পতাকা দিয়ে মোটরযান, রেলগাড়ি অথবা নৌযানের খোল, সম্মুখভাগ অথবা পেছনের অংশ কোনো অবস্থাতেই ঢেকে দেয়া যাবে না।
  • যেসব ক্ষেত্রে কেবলমাত্র দুটি পতাকা অথবা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ ভবনের ডানদিকে উত্তোলন করা হবে।
  • বাংলাদেশের পতাকা’র উপরে অন্য কোনো পতাকা বা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা যাবে না।
  • যে ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ একত্রে উত্তোলন করা হয়, সেক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ প্রথমে উত্তোলন করতে হবে এবং নামানোর সময় সবশেষে নামাতে হবে।
  • যে ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের পতাকা’ অর্ধনমিত থাকে, সেক্ষেত্রে প্রথমে সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত উত্তোলন করা হবে এবং অতঃপর নামিয়ে অর্ধনমিত অবস্থায় আনা হবে। ওই দিবসে পতাকা নামানোর সময় পুনরায় উপরিভাগ পর্যন্ত উত্তোলন করা হবে, অতঃপর নামাতে হবে।
  • ‘পতাকা’ কোনো ব্যক্তি বা জড় বস্তুর দিকে নিম্নমুখী করা যাবে না।
  • পতাকা’ কখনই তার নিচের কোনো বস্তু যেমন- পানি বা কোনো পণ্য দ্রব্য স্পর্শ করবে না।
  • ‘পতাকা’ কখনই আনুভূমিকভাবে বা সমতলে বহন করা যাবে না, সর্বদাই ঊর্ধ্বে এবং মুক্তভাবে থাকবে।
  • পতাকাকে কখনও পদদলিত করা যাবে না।
  • কোনো কিছু গ্রহণ, ধারণ, বহন বা বিলি করার জন্য ‘পতাকা’ ব্যবহার করা যাবে না।
  • ‘পতাকা’ দ্রুত উত্তোলন করতে হবে এবং সসম্মানের সঙ্গে নামাতে হবে।
  • পতাকার অবস্থা যদি এমন হয় যে, তা আর ব্যবহার করা যাবে না, নষ্ট হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে তা মর্যাদাপূর্ণভাবে, বিশেষ করে সমাধিস্থ করে নিষ্পত্তি করতে হবে।

জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নিয়ম

বিধি ৪.১ (২)-এ বলা আছে নিম্নবর্ণিত দিবসসমূহে ‘‘পতাকা” অর্ধনমিত থাকিবে: (ক) ২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস; (খ) ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস; এবং (গ) সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত অন্য যে কোন দিবস। এরপর বিধি ৭ এর (১২)তে বলা আছে ‘‘পতাকা”র সম্মান বজায় রাখার বিষয়ে।

বর্ণনাটা এ-রকম: যেক্ষেত্রে ‘‘বাংলাদেশের পতাকা অর্ধনমিত থাকে, সেইক্ষেত্রে প্রথমে সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত উত্তোলন করা হইবে এবং অতঃপর নামাইয়া অর্ধনমিত অবস্থায় আনা হইবে। ঐ দিবসে নামাইবার সময় পুনরায় উপরিভাগ পর্যন্ত উত্তোলন করা হইবে, অতঃপর নামাইতে হইবে।’’

তাহলে মনে রাখতে হবে: প্রথমত, পতাকা দণ্ডের সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত উঠাতে হবে। দ্বিতীয়ত, দণ্ডের চূড়া থেকে পতাকা নিচে নেমে আসবে এবং অর্ধনমন অবস্থায় থাকবে।

শোকদিবসে জাতীয় পতাকার অবস্থান

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ থেকে আমরা বুঝতে পাচ্ছি যে, পতাকা-দন্ডের চূড়া থেকে নিচে পতাকাটি অবস্থান করবে। বিভিন্ন শোক দিবসে উত্তোলিত পতাকার অবস্থান পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, কমপক্ষে পতাকার প্রস্থের সমান নিচে এবং পতাকা-দণ্ডের অর্ধেকের বা মধ্যবিন্দুর উপরে মাঝামাঝি যে কোন বিন্দুতে পতাকাটি অবস্থান করবে। এর প্রতীকী তাৎপর্য হলো, পতাকার উপরে যে শূন্য অংশটি থাকে তা যাঁকে বা যাঁদেরকে স্মরণ করা হচ্ছে তাঁদেরই প্রতীক।

পতাকা’র আয়তন এবং বর্ণনা

‘জাতীয় পতাকা’ গাঢ় সবুজ রঙের হইবে এবং ১০:৬ দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের আয়তক্ষেত্রাকার সবুজ রঙের মাঝখানে একটি লাল বৃত্ত থাকিবে। লাল বৃত্তটি পতাকার দৈর্ঘ্যরে এক-পঞ্চমাংশ ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট হইবে। পতাকার দৈর্ঘ্যরে নয়- বিংশতিতম অংশ হইতে অঙ্কিত উল্লম্ব রেখা এবং পতাকার প্রস্থের মধ্যবর্তী বিন্দু হইতে অঙ্কিত আনুভূতিক রেখার পরস্পর ছেদ বিন্দুতে বৃত্তের কেন্দ্র বিন্দু হইবে।

রং

(ক) পতাকার সবুজ পটভূমি হইবে প্রতি হাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট গ্রীন এইচ-২ আর এস ৫০পার্টস।

(খ) লাল বৃত্তাকার অংশ হইবে প্রতি হাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট অরেঞ্জ এইচ-২ আর এস ৬০ পার্টস।

ভবনে ব্যবহারের জন্য ‘পতাকা’র আয়তন

(ক) ১০ ফিট x ৬ ফিট

(খ) ৫ ফিট x ৩ ফিট

(গ) ২.৫ ফিট x ১.৫ ফিট

[সরকার ভবনের আয়তন অনুযায়ী এবং প্রয়োজন দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ঠিক রাখিয়া বড় আয়তনের পতাকা প্রদর্শনের অনুমতি প্রদান করতে পারিবে]

গাড়ীতে ব্যবহারের জন্য

‘পতাকা’র আয়তন

(ক) ১৫ ইঞ্চি x ৯ ইঞ্চি………….. বড় গাড়ীর জন্য

(খ) ১০ ইঞ্চি x ৬ ইঞ্চি………….. ছোট এবং মাঝারি আকারের গাড়ীর জন্য

আন্তর্জাতিক এবং দ্বিপাক্ষিক কনফারেন্সের জন্য ‘টেবিল পতাকা’র আয়তন ১০ ইঞ্চি x ৬ ইঞ্চি

ব্যাখ্যা

(ক) পতাকার দৈর্ঘ্য ১০ ফিট হইলে প্রস্থ হইবে ৬ ফিট

(খ) পতাকার লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হইবে ২ ফিট

(গ) বামদিক হইতে পতাকার দৈর্ঘ্যরে ৪.৫ হইতে একটি উল্লম্ব রেখা টানিতে হইবে এবং পতাকার প্রস্থের মধ্যভাগ হইতে একটি আনুভূমিক রেখা টানিতে হইবে

(ঘ) এই উভয় রেখার ছেদ বিন্দুটি হইবে লাল বৃত্তের কেন্দ্র


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker