জাতীয়

সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতি লাগবে, সংসদে বিল পাস

স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে করা ফৌজদারি মামলায় আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করার আগে তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে―এমন বিধান রেখে জাতীয় সংসদে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল-২০২৩’ পাস হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। তাদের প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

পাস হওয়া সরকারি চাকরি আইনে স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, অবসর সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

পাস হওয়া বিলের ৪১ ধারায় বলা আছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেপ্তার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে।’

বিলে আরো বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ১৫, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪ ও ৪৫ ধারার বিধান স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকারের অধীন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। ২০১৮ সালের আইনের ১৫ ধারায় বলা আছে, সরকারি গেজেটে আদেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি কর্মচারীর বা সব সরকারি কর্মচারীর বা সরকারি কর্মচারীর কোনো একটি অংশের জন্য বেতন, ভাতা, বেতনের গ্রেড বা স্কেল, অন্যান্য সুবিধা ও প্রাপ্যতা বা অবসর-সুবিধা সম্পর্কিত শর্তাদি নির্ধারণ করতে পারবে সরকার।.

বিল পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, জনপ্রশাসনে আজ চরম বিশৃঙ্খলা। তারা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স মানেন না। প্রজাতন্ত্রের কিছু কর্মচারী নিজেকে স্বঘোষিত মার্শাল আইয়ুব খান বা তার অনুসারী ভাবেন। তাদের ইচ্ছেমতো স্বাধীন ও জনস্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।

তিনি বলেন, কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে গেলে দেখা যায় সচিব, অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিব মন্ত্রীর স্বাক্ষর থাকার পরও ঠিকমতো কাজ করেন না। বেশির ভাগ দপ্তরের কর্মকর্তারা জনপ্রতিনিধিদের প্রাপ্য সম্মান দিতে ইতস্তত বোধ করেন। কিছু ক্ষেত্রে মন্ত্রীদেরও অসহায় দেখা যায়। তাদের (মন্ত্রী) ইচ্ছা বা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতেও গড়িমসি করেন।

তিনি আরো বলেন, সরকার মনে করে জনপ্রশাসন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে তাদের হেফাজত করবে।

এটা ভালো লক্ষণ নয়। এতে জনপ্রশাসনে বিশৃঙ্খলা বাড়বে। প্রতিষ্ঠানগুলো ভিত্তি দুর্বল হবে, জনস্বার্থ বিঘ্নিত হবে।

সংশোধিত আইনটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির পীর ফজুলর রহমান। তিনি বলেন, ফৌজদারি মামলায় অভিযোগ গঠনের আগে যে কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়। এ জন্য কারো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের অভিযোগ গ্রহণের আগে গ্রেপ্তার করা যাবে না, এটা আইনের চোখে সবাই সমান, এই নীতির পরিপন্থী।

এই আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার দাবি জানান। তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ৩৫, ৪০, ৫৫ এমনকি ৫৯ বছর পর্যন্ত চাকরির বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে একেবারে নিম্ন পর্যায়ে আছে। বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হলে বেকার সমস্যা লাঘব হবে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker