জাতীয়

শ্বাসকষ্টসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় এলাকা ছাড়ছেন অনেকে

দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ আর পুড়ে যাওয়া কাপড়ের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যায় পড়েছে সীতাকুণ্ডের বেশ কিছু এলাকায় মানুষ। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

এছাড়া, বিস্ফোরণের কারণে ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাসায়নিকের ধোঁয়া ধোয়া পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনা পাঁচ দিন পার হবার পরও রাসায়নিকের ধোঁয়ায় এখনও আচ্ছন্ন সেখানকার আকাশ।

আগুনের উত্তাপ ও ধোঁয়া সরাসরি ছড়িয়েছে প্রায় আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। আর একের পর এক কনটেইনারের বিকট শব্দের প্রভাব পড়েছে আরও অনেক দূরের এলাকায়।

সীতাকুণ্ডের ডিপোতে আগুনের পরপরই স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে বাসিন্দাদের। তারা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন বিস্ফোরণের ক্ষতি। এক ধরনের ট্রমার মধ্যে রয়েছেন তারা।

আবারো বিস্ফোরণের শঙ্কা আর রাসায়নিকের ধোঁয়ার কারণে ঘটনার পর থেকেই আশপাশের এলাকা থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন অনেকে।

বিশেষ করে কনটেইনার ডিপোতে কাজ করা শ্রমিকেরা থাকতেন যেসব এলাকায়, সেখানকার ভাড়া ঘরগুলো প্রায় খালি হয়ে গেছে।

বিস্ফোরণে অনেকের ঘরবাড়ির টিন, জানালা, ফ্রিজ টিভিসহ নষ্ট হয়েছে নানা আসবাবপত্র। ভেতর থেকে ছিটকে আসার কন্টেইনারের নানা অংশ পড়ে আছে বসতবাড়ির সামনে।

বিস্ফোরণে উড়ে আসা রাসায়নিকে ক্ষতি হয়েছে শিশুদেরও। এলাকাবাসী বলছেন, ধোঁয়ার কারণে টিকা যাচ্ছে না। নাক, মুখ বন্ধ করে চলাফেরা করতে হচ্ছে।

গেলো কয়েকদিন ধরেই চোখ জ্বলা শুরু হয়েছে। অনেকের শরীরে জ্বালাপোড়া বেড়েছে। এমন কি শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে তাদের। এলাকায় তাপমাত্রা বেড়ে যাবার অভিযোগও করছেন তারা।

শিশুদের নিয়েও আছেন চিন্তায়। বলছেন, ভয়ে ছোট ছেলে মেয়েরা খেলতেও বের হচ্ছে না। দাহ্য রাসায়নিকে পুড়ে যাওয়া অংশের ক্ষত বেড়ে যাচ্ছে। অসুস্থ হচ্ছে শিশুরা।

ডিপোতে বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় রাসায়নিকের বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় আশপাশের জনবসতিতে থাকা বাসিন্দাদের অনেকেই নাখ-মুখ ঢেকে চলাচল করছেন।

ধোঁয়া আর রাসায়নিকের পোড়া গন্ধে অসুবিধায় পড়ার কথা জানিয়েছেন আশপাশের তিন গ্রামের বাসিন্দারাও। পোড়া গন্ধে বেশি অসুবিধার কথা জানিয়েছেন শিশু ও বৃদ্ধরা।

রাসায়নিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোন রাসায়নিকের ধোঁয়াই স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি। বিস্ফোরণ ও আগুনে সৃষ্ট ধোঁয়ার প্রভাব পরিবেশের থাকবে দীর্ঘ মেয়াদী।

পরিবেশ অধিদপ্তরও বলছে, বায়ুমণ্ডলে এখনো অনেক রাসায়নিক পাটিকেল আছে। অতিরিক্ত ধোঁয়ার কারণে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ছাড়পত্র নবায়ন করার সময় কোন রাসায়নিক বস্তু ছিলো না। তথ্য গোপন করায় তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

রাসায়নিক রাখার ক্ষেত্রে বিএম প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক নিয়ম মানেনি। পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার মতও কোন ব্যবস্থাও ছিলো না।

পরিবেশ অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন নেভানোর যন্ত্র পর্যাপ্ত ছিলো না। আর দাহ্য পদার্থ ও তৈরি পোশাকের কারণেই আগুন ভয়ংকর হয়ে উঠে।

উল্লেখ্য, কনটেইনার ডিপোটিতে হাইড্রোজেন পারক্সাইড নামের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ছিল। হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ।

এটি যদি উত্তপ্ত করা হয়, তাহলে তাপীয় বিয়োজনে হাইড্রোজেন পারক্সাইড বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে। আর সেটিই হয়েছে শনিবার রাতে আগুন লাগার পর থেকে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker