জাতীয়

দায় চিহ্নিত করার দায় কার?

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় বেশি মানুষ পুড়েছে গাফিলতি আর ভুলের কারণে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কন্টেইনার ভর্তি রাসায়নিকের কথা জানায়নি ডিপো কর্তৃপক্ষ; নিয়ম মেনে রাসায়নিক রাখার অনুমতি ছিলো না; বিপজ্জনক বিস্ফোরক পদার্থ রাখার জন্য বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয় যা এই ডিপোর ছিলো না!

এই অনিয়মগুলো দেখার দায়িত্ব কাদের ছিলো? সেই দায়িত্ব এখন কেউই নিচ্ছে না!

জানা গেছে, ৩৩ কন্টেইনারে তারা প্রায় ৮০০ টন হাইড্রোজেন পারক্সাইড মজুদ করে রেখেছিল এই ডিপো কর্তৃপক্ষ। আগুনের সংস্পর্শে এ রাসায়নিক তীব্র দাহ্য হয়ে ওঠে এবং এরপর আগুন নেভাতে যখন পানি ব্যবহার করা হয়, তখন ভয়াবহ বিস্ফোরকে পরিণত হয় এটি।

সোমবার (৬ জুন) একাত্তর সংবাদযোগে এ নিয়ে কথা বলা হয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব নাছিমা বেগম ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহর সাথে।

এখানে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর যে অধিকার সংবিধান দিয়েছে এ দেশের মানুষকে, সেটি লঙ্ঘিত হয়েছে- এ নিয়ে সঞ্চালক মাহবুব হাসান তার কাছে জানতে চাইলে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে নাছিমা বেগম বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে একটি সুয়োমোটো নেয়া হয়েছে এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে এ ঘটনায় দায়ী ও দোষীদের চিহ্নিত করে একটি প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও এই দুর্ঘটনায় যাদের প্রাণহানি হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা এবং এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

অতীতের এ ধরণের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের আন্তরিকতা ও দক্ষতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি এই রাসায়নিক দাহ্য পদার্থগুলোর উপস্থিতির কথা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের জানা থাকতো, তাহলে হয়তো এত প্রাণহানি ঘটতো না। এই দুর্ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন, এই রাসায়নিকের উপস্থিতির কারণে তাদের চোখের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়।

দায়িত্বশীলদের নিয়মিত দায়িত্বে অবহেলার সংস্কৃতির কথা উল্লেখ করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিবারই একেকটা ঘটনা ঘটে আর আমরা নড়েচড়ে বসি! আমাদের তখন মনে হয় কোথায় কি কি গাফিলতি ছিলো!

নাশকতা বলে দাবি করে দায় এড়ানোর চেষ্টা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে যে রাসায়নিক ছিলো, তার তথ্য ফায়ার সার্ভিসকে দিতে কি অসুবিধা ছিলো!? ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের শুধু গার্মেন্টস পণ্যের কথা বলে বিভ্রান্ত না করে সঠিক তথ্য দিলে তারা অন্তত সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে পারতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ফায়ার সার্ভিসকে সঠিক তথ্য না দেয়া, ফায়ার হাইড্রেন্ট ও অন্যান্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই এতো বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পদার্থের মজুদ- এসব অভিযোগগুলোর প্রেক্ষিতে মানবাধিকার কমিশনের কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কোনো সুযোগ আছে কিনা- একাত্তরের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে নাছিমা বেগম বলেন, সুযোগ অবশ্যই আছে এবং তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তা নেয়া হবে।

সবার দায় এড়ানোর পাঁয়তারার সমালোচনা করে তিনি বলেন, যার যেখানে দায়-দায়িত্ব আছে, তা যদি আমরা এড়ানোর চেষ্টা করি, সেটা ঠিক হবেনা। সঠিকভাবে নিজেদের ওপর দায়িত্ব নিয়ে এই ঘটনাগুলোর সমাধান করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সবাইকে যার যার দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালনের আহ্বান জানান তিনি।

এসময় সংবাদযোগে আরও যুক্ত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ। তিনি বলেন, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দুর্নীতিবাজ, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা লোভের কারণে। বারবার এরকম মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে আর বারবার এর পেছনের কারণ খুঁজতে গিয়ে অনেক কারণ বেরিয়ে আসে কিন্তু প্রত্যেকটা ঘটনার মূল কারণ দুর্নীতিবাজ, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা।

অভিযোগ আসছে, এই ডিপোর মালিক ও রাসায়নিক কারখানার মালিকের সরকারী দলের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে। সেই সম্পৃক্ততার কারণেই কি এই অনিয়ম দেখা হয়নি, তাকে ছাড় দেয়া হয়েছে- এমন এক প্রশ্নের জবাবে আহকাম উল্লাহ বলেন, ব্যবসায়ীরা আসলে কোনো দলের সাথে যুক্ত থাকেন না। তারা আসলে নিজেদের স্বার্থেই সবরকম প্রক্রিয়াকে কিনে নিয়ে তার সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিতের চেষ্টা করে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker