জাতীয়

দুর্বল চুক্তিতে দুর্ভোগ রেলের টিকিট কাটায়

এবারই প্রথম বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে ‘কিউ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ যুক্ত করা হলো। এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্টসংখ্যক মানুষ একসঙ্গে ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারবে। এর বাইরে যারা রেলওয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশের চেষ্টা করেছে তাদের থাকতে হয়েছে অপেক্ষায়। ওয়েবসাইট ব্যবহারকারী ওই নির্দিষ্টসংখ্যক মানুষ থেকে যতজন বের হবে, ঠিক ততজন অপেক্ষমাণ ওয়েবসাইটে প্রবেশের সুযোগ পাবে।

কিউ ম্যানেজমেন্টের এই পদ্ধতির পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে। এই পদ্ধতিতে দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ একসঙ্গে রেলওয়ের ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পেরেছে। ফলে লাখ লাখ টিকিটপ্রত্যাশীকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হয়েছে। অনেকে প্রবেশও করতে পরেনি। এ কারণে বেশির ভাগ মানুষ অনলাইনে টিকিটও পায়নি। গতকাল শনিবার রেলের টিকিট কেনার জন্য অনলাইনে রেলওয়ের ওয়েবসাইটে প্রতি মিনিটে লাখো মানুষ ঢোকার চেষ্টা করে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ের ওপর নির্ভর করে কিউ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে কত মানুষ একসঙ্গে ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারবে। ব্যবহারকারীর সংখ্যা যত বাড়বে, সেই অনুপাতে খরচও বাড়বে।

রেলওয়ের টিকিট বিক্রির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘সহজ ডটকম’-এর। কিউ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটিও প্রতিষ্ঠানটি যুক্ত করেছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, রেলওয়ের দুর্বল ওয়েবসাইট বাঁচাতে, নাকি প্রতিষ্ঠানটির খরচ কমাতে এমন ব্যবস্থা যুক্ত করা হলো? আবার রেলের সঙ্গে সহজের যে চুক্তি, তাতে এমন ব্যবস্থা যুক্ত করা যাবে কি না, সে বিষয়ে সপষ্ট কিছু বলা নেই।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, সহজ ডটকমের সঙ্গে রেলের যে চুক্তি হয়েছে, তাতে এমন ব্যবস্থা যুক্ত করতে পারবে না বলে উল্লেখ নেই। চুক্তিতে প্রযুক্তিগত কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে।

সহজ ডটকমের ব্যবস্থাপক ফারহাত আহমেদ (জনসংযোগ) কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিউ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যুক্ত করা বা না করা নিয়ে চুক্তিতে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। তবে চুক্তি অনুযায়ী, রেলের যাত্রীদের উন্নত সেবা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। গতকাল (শনিবার) আমাদের সাইট সচল ছিল। একসঙ্গে দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ ওয়েবসাইট ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে অনলাইনে টিকিট কেনার চেষ্টা করে। এই চাহিদার সঙ্গে জোগানের বিস্তর ফাঁরাক রয়েছে। সবাই টিকিট পাবে না, এটাই স্বাভাবিক। আজ (গতকাল) অনলাইন ও কাউন্টার মিলিয়ে প্রথম ঘণ্টায় সারা দেশে ৫০ হাজার টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। ’

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রেলের ওয়েবসাইট বলতেই মানুষ বোঝে বাংলাদেশ রেল। এটা সরকারি প্রতিষ্ঠান, জনগণের নিজস্ব সম্পদ। এতে সব মানুষের প্রবেশের সমান সুযোগ থাকবে। একসঙ্গে নির্দিষ্টসংখ্যক মানুষের বেশি ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারবে না, এটা হঠকারী সিদ্ধান্ত। এতে প্রমাণিত হয়, তাদের চুক্তিতে দুর্বলতা রয়েছে। রেল ও সহজের সক্ষমতার অভাব রয়েছে। ’

তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিউ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে ওয়েবসাইটে মানুষের প্রবেশ করার সক্ষমতা যত বেশি থাকবে, সেই অনুপাতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের খরচ বাড়বে। সরকারি ওয়েবসাইটে এ ধরনের ব্যবস্থা যুক্ত করা ঠিক কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে ১৩ হাজার টিকিটের বিপরীতে দুই লাখ মানুষকে একসঙ্গে ওয়েবসাইট ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া আদর্শ মান কি না, সেটাও বলা কঠিন। ’

চার ঘণ্টায় শেষ ‘সব’ টিকিট

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল ৮টায় অনলাইনে ও কাউন্টারে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। অনেকে মধ্যরাতেই টিকিট পেতে কাউন্টারে লাইনে দাঁড়ায়। তবে শেষ পর্যন্ত সবাই টিকিট নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেনি। দুপুর ১২টার পরই কমলাপুর রেলস্টেশনে আগামী ২৭ এপ্রিলের সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। তার আগে অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগির টিকিট।

রাজধানীর বিমানবন্দর ও তেজগাঁও রেলস্টেশনেও রেলের টিকিটপ্রত্যাশীর উপচে পড়া ভিড় ছিল। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে যাত্রীর চাপ কিছুটা কম থাকলেও প্রায় ফাঁকা ছিল ফুলবাড়িয়ায় পুরনো রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার।

সাড়ে ২৬ হাজার টিকিট বিক্রি

গতকাল বিক্রি করা হয়েছে ২৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট। ওই দিন ঢাকা থেকে ২৬ হাজার ৬৬৩ জন যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে রেলওয়ের।

রেলের টিকিট বিক্রির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সহজের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ঢাকার পাঁচ স্টেশন ও অনলাইন মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে কমলাপুর, ফুলবাড়িয়া, তেজগাঁও ও ক্যান্টনমেন্ট থেকে প্রায় ১৪ হাজার টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। এসব স্টেশন থেকে পাওয়া যাবে এমন টিকিট অনলাইন থেকে কেনা হয়েছে প্রায় ১১ হাজার। আর বিমানবন্দর স্টেশন থেকে টিকিট বিক্রি করা হয়েছে প্রায় দেড় হাজার। এই স্টেশন থেকে পাওয়া যেত এমন টিকিট অনলাইনে ২০০-এর মতো বিক্রি করা হয়েছে।

অনলাইন-কাউন্টার সব জায়গায় ভোগান্তি

রেলের টিকিটের জন্য গতকাল ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। সেটা অনলাইন ও কাউন্টার দুই জায়গায়ই। অনেককে কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়েও অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। বহু টিকিটপ্রত্যাশী মধ্যরাত থেকে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। শেষ পর্যন্ত তারা টিকিট পায়নি।

কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘ঢাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৭ হাজার টিকিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এই টিকিটের অর্ধেক স্টেশনের কাউন্টারে এবং বাকি অর্ধেক অনলাইনে বিক্রি হওয়ার কথা। সবাই টিকিট পাবে না, এটাই স্বাভাবিক। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। যতক্ষণ টিকিট থাকবে, ততক্ষণ যাত্রীরা টিকিট পাবে। কাউন্টারের পাশাপাশি অনলাইনেও টিকিট দেওয়া হচ্ছে। ’


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker