জাতীয়

২৬ মার্চ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ

মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরি করছে সরকার। এরই মধ্যে ১৯১ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন করে শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। সেগুলোও যাচাই-বাছাই করে আগামী বছরের ২৬ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে কালের কণ্ঠকে বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্বীকৃতির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারা শহীদ বুদ্ধিজীবী, তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বাছাই পর্বে কিছু আবেদন অনিষ্পত্তি অবস্থায় রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আবেদন পাওয়ার পর দেখা হয়, শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচনায় তিনি আসেন কি না। এরপর সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সব কিছু নির্ধারণ করা হয়। আবেদনকারীদের অনেকে নানা কারসাজির আশ্রয় নিয়ে থাকেন বলে এই সতর্কতা।

বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের শেষের দিকে দেশের শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকসহ নানা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পেশাজীবীদের টার্গেট করে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় মিত্ররা। স্বাধীনতার পর থেকে তাঁদের স্মরণে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। তবে এত দিন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রাষ্ট্রীয় কোনো তালিকা ছিল না। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় উদ্যোগী হয়ে তালিকা তৈরি করছে।

জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ে যেসব আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলো শহীদদের পরিবারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। কারো স্ত্রী, কারো সন্তান এসব আবেদন করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার ক্ষেত্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী কারা হবেন—এর একটি মানদণ্ড তৈরি করা হয়েছে। যেসব সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিত্সক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাটক-সংগীত ও শিল্পকলার অন্যান্য শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, যাঁরা বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী কিংবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহীদ কিংবা চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁরা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

সূত্র জানায়, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরি করতে গবেষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গত বছরের ১৯ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সভাপতি করে যাচাই-বাছাই কমিটি করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি চৌধুরী শহীদ কাদের, জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ এবং গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের গবেষক গাজী সালাউদ্দিন।

কমিটিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের মধ্যে আছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু ও লে কর্নেল কাজী সাজ্জাদ জহির (বীরপ্রতীক)।

জানা গেছে, প্রথম দফায় কমিটিতে চার শতাধিক আবেদন জমা পড়ে। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ১৯১ জনকে শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে চিহ্নিত করার পর তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা মূলত ঢাকাসহ বড় বড় শহরকেন্দ্রিক ছিল। জেলা থেকে তেমন কেউ জানত না, আবেদনও করত না। এখন অনেক আবেদন পাওয়া যাচ্ছে।

জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির কাজ ১৯৭২ সালে শুরু হলেও সেই তালিকা কখনো সরকারি নথি বা গেজেটভুক্ত হয়নি। প্রথমবারের মতো ১৯১ জনের নামে গেজেট প্রকাশ করা হলো।

কমিটির সদস্য শাহরিয়ার কবির গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ডাকটিকিটে অনেকের নাম ছিল, বাংলা একাডেমির গবেষণাও রয়েছে। তাঁদের নিয়ে কোনো বিতর্কও নেই। প্রাথমিকভাবে তাঁদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

জানা যায়, ১৯৭২ সালে প্রাথমিকভাবে এক হাজার ৭০ শহীদ বুদ্ধিজীবীর একটি তালিকা করেছিল তত্কালীন সরকার। পরে ডাক বিভাগ ১৫২ শহীদ বুদ্ধিজীবীর ডাকটিকিট প্রকাশ করে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker