‘গ্রামের স্কুলের এক ছাত্রের জন্যই যদি আমার ১৫শ’ টাকা দেওয়া লাগে, তাইলে আর পড়াশোনার দরকার নাই৷ আমার পুলাও রিকশা চালাইয়া খাবোনি।’ অভিমানের সুরেই কথাগুলো বলেন সুজন মিয়া নামে এক অভিভাবক।
সারাদেশের মতো শেরপুরেও রোববার (১ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়েছে বই উৎসব। ১৫ লাখ বইয়ের ঘাটতি নিয়েই জেলার সব স্কুলে বই বিতরণ হলেও ভিন্ন চিত্র ছিল জেলার শ্রীবরদী উপজেলার ভারেরা ছমিরুদ্দীন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে। টাকা না দেওয়ায় বই না পেয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একটি ভিডিও রোববার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনার প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর চড়াও হয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, ভর্তি ও সেশন চার্জের টাকা দেওয়ার পরও বাড়তি পাঁচশো টাকা নেওয়া হচ্ছে। টাকা না দিতে পারায় বই ছাড়াই ফিরে যেতে হয়েছে অনেককে।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী অপু জানায়, ‘তিনশো টাকা নিয়ে স্কুলে আসছিলাম কালকে (রোববার), স্যাররা বই দেন নাই। বলছেন, পাঁচশো টাকা না দিলে বই দেবে না।’
আরেক শিক্ষার্থী সিয়ামের ভাষ্য, ‘আব্বা বাড়ি থেকে টাকা দেয় নাই। আমি স্কুলে টাকা দিতে পারি নাই। এজন্য আমাকে বইও দেয় নাই।’
অভিভাবক নজরুল মিয়া বলেন, ‘আমি অটোরিকশা চালাই। আমার দুই মেয়ে এই স্কুলে পড়ে। একটা সেভেনে, আরেকটা নাইনে। দুজনের জন্য ভর্তির টাকা দিয়ে সব করে গেছি। তাও কাল বই দেয় নাই। দুজনের বইয়ের জন্য পাঁচশো টাকা করে চাইছে। এই টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমার নাই৷’
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য রুবেল মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের বই না পেয়ে ফিরে যাওয়ার বিষয়টা দুঃখজনক। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্যও কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি স্কুলের পক্ষ থেকে।
তবে এই ঘটনাকে সাজানো ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষিকা কামরুন্নাহার।
তিনি বলেন, ‘একটা মহল স্কুলের দুর্নাম রটানোর চেষ্টা করছে। আমরা ভর্তি ফি আর সেশন চার্জের বাইরে এক টাকাও নিই না৷’
এদিকে ভিডিও ভাইরালের পর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: রেজুয়ান।
তিনি বলেন, বিনামূল্যে বই দেওেয়ার সঙ্গে টাকা নেওয়ার সম্পর্ক নেই। কোনো পাওনা থাকলে তারা বই উৎসবের আগে বা পরে নেবে। যে অভিযোগ এসেছে, আমরা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।
রোববার জেলার ৭৪২টি সরকারি প্রাথমিক ও ১৮১টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই উৎসবে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.