আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে বন্যায় দাপিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও নিউজার্সিতে আকস্মিক বন্যায় অন্তত ৪৫ জন মারা গেছে। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে দেশটির পূর্ব উপকূলে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নিউইয়র্ক ও নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হাজারো বাংলাদেশি।

মাত্র ছয় ঘণ্টার বৃষ্টি। বুধবার রাতের আধারে ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে। নিউইয়র্কের সাবওয়ে, বিমানবন্দর, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, সবকিছু পানিতে তলিয়ে যায়। একই পরিস্থিতি পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্য নিউজার্সিতেও। আকস্মিক বন্যায় নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, পেনসিলভেনিয়া, মেরিল্যান্ড ও ভার্জিনিয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। দুটি অঙ্গরাজ্যে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। দেশটির ইতিহাসে অন্তত আড়াইশ’ বছরে এমন বন্যা পরিস্থিতি দেখেনি কেউ।

একজন ভুক্তভোগী বলেন, আমরা কেউ কোনোদিন এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমন পরিস্থিতি আরও সৃষ্টি হতে পারে।

আরেকজন প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন, আমার বাসার বেসমেন্টে কোমর পর্যন্ত পানি ছিল। আমার সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে।

উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি বসবাস করেন পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে। আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এসব এলাকার হাজার হাজার বাংলাদেশিও।

হারিকেন আইডার প্রভাবে সৃষ্ট বন্যায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। গত রোববার লুইজিয়ানায় আঘাত হানা শক্তিশালী চার মাত্রার হারিকেনটি দুর্বল হয়ে বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র অতিক্রম করে।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই স্বাভাবিক হয়েছে আবহাওয়া। কিন্তু বুধবার রাতে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টি-তাণ্ডবের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে গা শিউরে উঠছে অনেকের।

নিউইয়র্কের প্রায় সাবওয়ে লাইন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাস্তাঘাট থেকে জরুরি পরিবহন ছাড়া অন্যান্য পরিবহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না। নিউজার্সি এবং নিউইয়র্ক থেকে অনেক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

প্যাসিয়াক সিটির মেয়র হেক্টর লোরা সিএনএনকে সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তির মরদেহ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এনবিসি এবং এএফপি আরও জানায়,  অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে নিউইয়র্কে। তাদের কেউ কেউ বেসমেন্টে আটকা পড়েছিলেন। মৃতদের ভেতর নিউইয়র্কে ২ বছরের একটি শিশুও ছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায়,  মানুষের ঘরবাড়ি, সাবওয়ে এবং স্টেশনগুলো উপচে গেছে পানিতে।

নিউইয়র্কের বাসিন্দা জর্জ বেইলি বিবিসিকে জানান, রাতের খাবার গ্রহণের সময় আমি পানির শব্দ শুনতে পাই এবং শৌচাগারে গিয়ে দেখতে পারি সেখানে পানি নিষ্কাশনের জায়গা থেকে অনবরত দ্রুত গতিতে পানি ঢুকছে। আমি এরপর পানির প্রধান লাইনের সমস্যা ভেবে সেটা দেখতে যাই এবং ফিরে এসে দেখি প্রায় এক ফুট উঁচু পানিতে আমাদের বাসার বসার জায়গা ভেসে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর নিউইয়র্ক, ব্রুকলিন, কুইন্স, লং আইল্যান্ডের কিছু অংশে এই বন্যায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়াও ম্যাসাচুয়েটস এবং রোড আইল্যান্ডে সতর্কতাও মেনে চলতে বলা হয়েছে।

হারিকেন আইডার পর লুসিয়ানার হাজারো ঘরবাড়ি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে নিউ অর্লান্সে জারি করা হয় রাত্রিকালীন কারফিউ।

লুসিয়ানার কিছু শহর এই বন্যায় সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়। জিন লাফিতের মেয়র টিম কেরনার জানান, ছোট্ট শহরটি এই হারিকেনে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অন্তত ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker