তথ্য ও প্রযুক্তি

প্রতি ১০০০ ভিউতে ইউটিউব কত টাকা দেয়?

ইউটিউবিং বর্তমানে বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় পেশা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিশেষ করে তরুণেরা ইউটিউব এর প্রতি অনেক বেশি আকৃষ্ট। ইউটিউবিং জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথে ইউটিউবারদের মধ্যে কিছু সাধারণ প্রশ্নও জেগে উঠেছে। যেমন: ইউটিউব প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা দেয়? ইউটিউব থেকে কিভাবে আয় করা সম্ভব? ইউটিউব মনিটাইজেশন কি? এসইও কি? ইউটিউব থেকে কিভাবে টাকা তোলা সম্ভব? ইত্যাদি প্রশ্নগুলো অন্যতম।

সাধারণত যারা নতুন ইউটিউবিং শুরু করেছেন এবং ইউটিউবিং শুরু করার কথা ভাবছেন তাদের মধ্যে এই প্রশ্নটি বেশি উঁকি দেয় যে ইউটিউব থেকে প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা আয় করা যায়। এ প্রশ্নগুলো কারো মনে আসা তেমন অমূলক নয়। কারণ আপনি যে জায়গাতে কাজ করবেন সেখান থেকে কত টাকা পাবেন সেটা জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। তা না হলে দেখা যাবে আপনি ইউটিউবিং শুরু করার পরে, মাঝ পথে গিয়ে উৎসাহ হারাবেন। শেষ মেষ ইউটিউব থেকে টাকা আয় না করতে পেরে কাজটি ছেড়ে দিবেন। তাই আজ বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব ইউটিউব থেকে কত ভিউতে কত টাকা পাওয়া সম্ভব, কিভাবে ইউটিউব থেকে টাকা উপার্জন বাড়ানো যায় এবং ইউটিউব থেকে টাকা তোলার উপায়গুলো কি কি।

প্রথমেই জেনে রাখা ভালো যে, ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জনের জন্য চ্যানেলের ভিউ মূল বিষয় নয়। ইউটিউব অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে মূলত বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করে। ইউটিউব বিভিন্ন ধরনের জটিল হিসাব নিকাশ এর মাধ্যমে ইউটিউবারদেরকে টাকা প্রদান করে থাকে। এই হিসাব নিকাশ গুলোর মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞাপন গুলোর সিপিসি, সিটিআর, আরপিএম ইত্যাদি।

ইউটিউব থেকে আয় বলতে মূলত ইউটিউবের বিজ্ঞাপনদাতাদের থেকে প্রাপ্ত আয়কে বুঝায়। অর্থাৎ আপনার ইউটিউব চ্যানেলটিকে বিজ্ঞাপন দাতারা বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করবে। এর ফলে আপনি তাদের কাছ থেকে টাকা পাবেন। সহজ কথায়, আপনার চ্যানেলের ইউটিউব ভিডিওর শুরুতে, মাঝামাঝিতে বা বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞাপন দাতারা গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে তাদের বিজ্ঞাপন দেখাবে। এর বিনিময়ে আপনি ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করবেন।

কোনো চ্যানেলের ভিডিও দেখার সময় কি পরিমানে বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে এবং সেগুলোতে দর্শকেরা কি পরিমানে ক্লিক করছে সেটির উপরে হিসাব করে ইউটিউব থেকে অর্থ প্রদান করা হয়ে থাকে।

তাছাড়া দর্শকেরা কোনো চ্যানেলে বিজ্ঞাপন কতক্ষণ দেখছে এবং কতটুকু দেখার পর স্কিপ করছে সেটি সহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাব করে ইউটিউব থেকে টাকা আয় হয়ে থাকে। সেই সাথে একটি চ্যানেলের ভিডিওতে কি পরিমান বিজ্ঞাপন দেখানো হবে, বিজ্ঞাপনগুলোর ক্লিক রেট কত হবে এবং বিজ্ঞাপন ভিউ রেট কত হবে ইত্যাদি বিবেচনা করে সাধারণত ইউটিউব একজন ইউটিউবারকে টাকা প্রদান করে থাকে।

ইউটিউবে বিভিন্ন চ্যানেলে ভিডিও দেখার সময় আমরা লক্ষ্য করি যে কিছু চ্যানেলে অতিরিক্ত পরিমাণে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। আবার দেখি যে, কিছু চ্যানেলে কোন বিজ্ঞাপনই দেখানো হয় না। এই বিষয়টি থেকে আমরা বুঝতে পারব যে, চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার এর উপর ইউটিউবের বিজ্ঞাপন নির্ভর করেনা। বিজ্ঞাপন নির্ভর করে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের এর উপর।

এই বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- ভিডিওটির বিষয়বস্তু কি, ভিডিওটিতে কোন কোন কিওয়ার্ড রয়েছে, ভিডিওটি কি সম্পর্কিত , চ্যানেলটির মান কেমন এবং কোন কোন দেশ থেকে ভিডিওটি দেখা হচ্ছে এগুলোর উপর। এই সবকিছু বিবেচনা করে ইউটিউব কোন নির্দিষ্ট ভিডিওতে বিজ্ঞাপন প্রদান করে থাকে।

সাধারণত শেয়ার মার্কেট, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং টেকনোলজি নির্ভর ইউটিউব চ্যানেল গুলোতে বিজ্ঞাপন প্রদানের হার বেশি হয়ে থাকে। যার ফলে এই ধরনের চ্যানেলগুলো থেকে বেশি পরিমানে আয় হয়ে থাকে ।

অপরদিকে শিক্ষা বিষয়ক চ্যানেলগুলোতে আয় তুলনামূলক কম থাকে। কারণ এই চ্যানেলগুলোর দর্শকেরা সাধারণত ১৮ বছরের কম বয়সি হয়ে থাকেন। ফলে বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হন না।

সুতরাং ইউটিউব কত ভিউতে কত টাকা দেয়, কিংবা ইউটিউব থেকে প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা পাওয়া সম্ভব এটি সরাসরি বলা সম্ভব নয়। আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও গুলোর কিওয়ার্ড এবং ভিডিওগুলোর ধরন অনুযায়ী নির্ভর করে ইউটিউব থেকে অর্থ আয়ের পরিমান কম বেশি হতে পারে।

ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে ইউটিউবের কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে ৷ এগুলোর মধ্যে CPM (Cost per Miles) এবং CPC (Cost Per Click) অন্যতম। CPM কে অনেকে বলেন থাউস্যান্ডের হার। ইউটিউবারদের CPM রেট বিভিন্ন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উঠানামা করে।

ইউটিউব চ্যানেলের বিষয়, কিওয়ার্ড ও ভিউয়ার গ্রুপের ভিন্নতার কারনেও CPM রেট এর তারতম্য হয়। সাধারণত  বিজ্ঞান প্রযুক্তি, শেয়ার মার্কেট ইত্যাদি ভিত্তিক চ্যানেলগুলির CPM রেট সব থেকে বেশি। আবার ভারতীয় ভিউয়ার, আমেরিকান ভিউয়ার ও বাংলাদেশী ভিউয়ারদের মধ্যে আমেরিকান ভিউয়ার বেশি হলে ইউটিউব থেকে তুলনামূলক বেশি অর্থ আয় করা সম্ভব।

অন্যদিকে শিক্ষা ভিত্তিক ও শিশুদের বিভিন্ন চ্যানেলগুলির CPM সাধারণত অনেক কম হয়ে থাকে। কারণ, এসব চ্যানেলের ভিউয়াররা মূলত ১৮ বছরের কম বয়সী। ১৮ বছরের নিচের বয়সের দর্শকদের প্রতি বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনদাতাদের আগ্রহ তুলনামূলক কম। এসব চ্যানেলের সিপিএম (CPM) রেট সাধারণত ২ ডলারে মধ্যেই থাকে।

CPM এর মতো CPC অর্থাৎ Cost Per Click-তে নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপনের লিংকে ক্লিক করলে তার পরিবর্তে টাকা পাওয়ার পদ্ধতিকে বুঝায়। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতার প্রোফাইলের ওপর নির্ভর করে CPM এর রেট কম বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশ এমনকি অঞ্চল ভেদেও CPC রেট উঠানামা করতে পারে।

এছাড়াও নিম্নোক্ত উপায়ে আপনার ইউটিব চ্যানেলের মাধ্যমে আপনি ইউটিউব থেকে টাকা উপার্জন করতে পারেন। যেমন:

  • মেম্বারশিপ চালু করা
  • সুপার চ্যাট
  • পণ্য বিক্রি
  • ইউটিউব প্রিমিয়াম ইত্যাদি ।

এই উপায়গুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন মাধ্যমে ইউটিউব থেকে টাকা রোজগার করা সম্ভব।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker