ইতিহাস ও ঐতিহ্য

কটিয়াদীতে প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে অস্তিত্ব হারাচ্ছে পরিবেশ বান্ধব বাঁশ-বেত শিল্প

বাড়ির পাশে সাজানো রয়েছে সারিসারি বাঁশ। সেই বাঁশগুলো থেকে বাছাই করা বাঁশটি সঠিক মাপে কাটা হচ্ছে। তারপর সেই বাঁশ থেকে তোলা হচ্ছে চিকন বেতি। সকাল থেকেই বাঁশ কাটা, বেতি তোলা আর সেই বেতি দিয়ে ওড়া, খাঁচা, ঢোলা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ফেকামারার ঢুলিকান্দা গ্রামে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

বাঁশ দিয়ে তৈরি পণ্য পরিবেশবান্ধব হলেও বিকল্প প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে, পণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়া, ক্রেতার সংকটে দিন-দিন বিক্রি কমছে বাঁশ ও বেতের তৈরির জিনিসের। দু’বছর ধরে করোনার কারনে গ্রামীন মেলা ও হাট-বাজার বন্ধ থাকায় সেই বিক্রি তলানিতে নেমেছে। ফলে চরম অস্তিত্ব রক্ষার সংকটে ভোগচ্ছে এখানকার বিখ্যাত বাঁশ-বেত শিল্প।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ওই গ্রামের প্রায় অর্ধ-শতাধিক পরিবার বাঁশ-বেত শিল্পের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। সংসারের যাবতীয় কাজ সামলে পরিবারের পুরুষ সদস্যের কাজে সহযোগিতা করতে দেখা যায় নারী সদস্যদের। বাঁশ দিয়ে তৈরি যাবার, ঢোলা, ডালা, চাটাই, কুলা, ওড়া, চালুন, মই, মাথাল, চাঁই, খাঁচা, ঝুড়িসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করেই চলে তাদের জীবনসংসার।

একটা সময় ছিল এই শিল্পে জড়িত ছিলেন কয়েক’শ শ্রমিক। সকাল থেকে বাঁশ কাটার আওয়াজ শুরু হতো এই গ্রামের সর্বত্র। প্লাস্টিক পণ্যের ছড়াছড়িতে সেই চিরচেনা শব্দ অনেকটাই স্তব্দ হয়ে গেছে। স্বাভাবিক নিয়মে সংসারে টান পড়েছে এই পেশায় জড়িতদের। সুখের সেই দিন আর নেই। আবার কবে তাদের মুখে হাসি ফুটবে এখন সেদিকে তাকিয়ে এই পেশায় নিয়োজিত সকলে।

এই পেশার সাথে জড়িত আবু তাহের (৭০) জানান, আগে এলাকার ঝোঁপঝাড়ে বেত পাওয়া যেত। এখন ঝোঁপঝাড় নেই তাই বেতও নেই। মাত্র কয়েক বছর আগেও এ অঞ্চলে বাঁশও সহজলভ্য ছিল। ৫০ থেকে ৬০ টাকায় একটি বাঁশ কেনা যেত। এখন একটির দাম দেড়শ থেকে দুইশ টাকা। কিন্তু সেই অনুপাতে তৈরি জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি। বাঁশ দিয়ে একটি ওড়া তৈরি করতে ৫০ টাকা খরচ পড়ে। অথচ বাজারে তা ৫০ টাকার বেশি বিক্রি করা যায় না। গত ৫৫ বছর ধরে শেঁকড় আকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। যদি কোন সরকারি সাহায্য পেতাম তবে আমাদের অনেক ঊপকার হত।

এই গ্রামের রেখা (৩৫) জানান, ধানের মৌসুম চলছে তাই যাবার ও ঢোলার কিছুটা চাহিদা রয়েছে। তাই ঢোলা তৈরি করছি। একসময় বোরো ধান মৌসুমে এখানের তৈরি ঢোলা কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনাসহ হাওর অঞ্চল থেকে পাইকারা এসে কিনে নিয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টিকের এই যুগে এর চাহিদাও কমে গেছে। এখন অভাব-অনটনে আমাদের দিন কাটচ্ছে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা: মোহাম্মদ মুশতাকুর রহমান বলেন, এই উপজেলার কিছু মানুষ এখনও বাঁশ-বেত শিল্পের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে। এই কুটির শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button