আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। এরই ধারাবাহিকতায় সবকিছুতেই যেন আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে। তাই বাদ যায়নি প্যাডেল রিকশাও। কর্মজীবী মানুষের জন্য এখন পেশী শক্তির বদলে আবিষ্কার হয়েছে ইলেকট্রনিক ও সহজলভ্য যানবাহন। গতর খেটে শরীরের ঘাম না ঝড়িয়ে যতটা আরাম আয়েশে কর্ম করা যায় মানুষ এখন সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছে।
তাই পায়ে চালিত রিকশার প্যাডেলের পরিবর্তে মানুষ এখন ঝুঁকে পড়েছে যান্ত্রিক এই ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায়। তবে খেটে খাওয়া দিন মজুরদের সকলের সামর্থ্য না থাকায় অনেকেই এখনো পায়ে প্যাডেল দিয়ে রিকশা চালাচ্ছেন। কিন্তু যান্ত্রিক রিকশার সাথে পেরে উঠছে না পেশি শক্তি দিয়ে প্যাডেল চালিত রিকশা। ফলে দুর্দিন পোহাতে হচ্ছে অসহায় রিকশা শ্রমিকদের। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আবিষ্কারকৃত অটোরিকশার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে প্যাডেল রিকশা।
শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষত, অপ্রাপ্ত শিশু কিংবা দিন মজুরের কাজ করা লোকেরাই এখন বেশিরভাগ ব্যাটারি চালিত অটো রিকশার চালক। ব্যাটারি চালিত রিকশায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকলেও এটাই এখন মানুষের প্রথম পছন্দ। কারো কারো মতে অলস মানুষের পেশা হিসেবে ব্যাটারি চালিত রিকশাই বেশি পছন্দ।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্করা ব্যাটারি চালিত রিকশা চালিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। তবুও পেটের তাগিদে অটোরিকশায় হয়ে উঠেছে জনপ্রিয় যানবাহন।
জানা যায়, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা আসার পর প্যাডেল রিকশার জায়গা পুরোটাই দখল করে নিয়েছে অটোচালক। বিগত কয়েক বছর আগেও হোসেনপুরে মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল রিকশা।
বর্তমানে উপজেলার হাসপাতাল মোড়, পশ্চিম পট্রি, নতুন বাজার এলাকায় মাঝেমধ্যে হাতেগোনা একটা দুইটা প্যাডেল রিকশা দেখা যায়। যে দু’একটি দেখা যায় সেগুলোও হয়ত অল্প দিনের মধ্যেই হারিয়ে যাবে। অথচ এক সময় উপজেলার আনাচে কানাচে দেখা যেত রিকশা। রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে সংসার চলত শত শত মানুষের। উপজেলার মধ্যে যে সকল প্যাডেল চালিত রিকশা চলাচল করে সেগুলোর চালকরাও বেশ বয়স্ক। তারা তাদের পেশি শক্তি দিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট করতে পারেন না যাত্রীদের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ধুলজুরি গ্রামের রিকশা চালক মোর্শেদ (৪৯) প্যাডেল রিকশা নিয়ে তীর্থের কাকের মতো যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, গত ১৬ বছর ধরে শহরে রিকশা চালাই। এখনো রিকশা চালিয়ে যাচ্ছি। গত ৭-৮ বছর আগেও প্রতিদিন ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা আয় করতে পারতাম। এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে সাড়ে ৩ শত থেকে সাড়ে চার শত টাকা আয় হয়। আবার কোনো কোনো দিন সেটা হয়ও না। মানুষ এখন আর রিকশায় উঠতে চায় না। ফলে কিছু মালামাল আনা নেয়ার কাজে আমার ডাক পড়ে। আমার অটো রিকশা কেনার টাকা নেই এজন্য বাধ্য হয়ে প্যাডেল রিকশাই চালাতে হয়।
পশ্চিম পট্রি মোড়ে ঢেকিয়া এলাকার রিকশা চালক কাশেম (৪৫) সাথে দেখা। তিনি বলেন, কেউ রিকশায় চড়ে দূরে কোথাও যেতে চায় না। আমরা দিনরাত যে টাকা আয় করি তা দিয়ে সংসার চলে না। দীর্ঘদিন ধরে রিকশা চালিয়ে আসছি। এটা ছেড়ে দিয়ে এখন অন্য কোনো পেশায় যাব তারও উপায় নেই।
হোসেনপুর উপজেলার দ্বীপেশ্বর গ্রামের প্রবীণ টুনু মুন্সী(১০০) সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা পূর্বে বাজার করা সহ বিভিন্ন কাজে বের হলে এ শহরে রিকশাতেই ঘুরে বেড়াতাম। তাছাড়া সেই সময়ে এতো যানবাহন ব্যবহার ছিল না। অধিকাংশ মানুষ বাসা থেকে বের হয়ে প্যাডেল রিকশায় চড়েই অফিস, আদালত ও দোকানপাটে পৌঁছাত। খুব ভালো ছিল সেই দিনগুলো।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মানুষের মধ্যে অলসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অটো চালকরা পায়ের উপর পা তুলে অটো চালায়। এতে দুর্ঘটনাও ঘটে। বর্তমানে শহরে যে পরিমান ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা চলাচল করে তাতে এই শহর থেকে প্যাডেল রিকশা-ভ্যান বিলুপ্ত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তাই আধুনিক প্রযুক্তির অটোরিকশার সাথে পাল্লায় হেরে আরেক প্রযুক্তি প্যাডেল রিকশা হারিয়ে হয়তো জাদুঘরে স্থান হবে এমনটাই আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা।