গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের প্রায় এক বছর পর পুনরায় অপারেশন করে এক নারীর পেট থেকে বের করা হলো গজ ও সুই। ঐ নারীর পেটে দীর্ঘ সময়ে গজ কাপড় ও সুই নাড়ির সঙ্গে মিশে যাওয়ায় পঁচন ধরে জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। ভুক্তভোগী ওই নারী বর্তমানে ঢাকা রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
প্রায় এক বছর পূর্বে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক কুহু মুৎসুদ্দী সিজারিয়ান ওই অপারেশনটি করেছিলেন কালিয়াকৈর বাজার দেওয়ান ডিজিটাল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড নামক একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
ভুক্তভোগী ওই নারী হলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার গোয়ালবাথান গ্রামের সিএনজি চালক মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী শম্পা আক্তার (২৫)।
অভিযোগ ও ভুক্তভোগী শম্পার পরিবার সূত্রে জানা যায়, গোয়ালবাথান গ্রামের মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী শম্পা আক্তারের প্রসব ব্যথা শুরু হলে গত বছরের ১৯শে আগস্ট। শম্পাকে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি চিকিৎসক কুহু মুৎসুদ্দী ভুক্তভোগী ওই নারীকে উপজেলার দেওয়ান ডিজিটাল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দিয়ে কোন প্রকার পরিক্ষা নিরিক্ষা ছাড়াই সেখানেই সিজাররিয়ান অপারেশন করেন তিনি।
সিজারিয়ান অপারেশনে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই সিজার করায় জন্মের পরের দিনই সেই কন্যা সন্তানের মৃত্যু হয়। সিজারের পর শম্পা আক্তারের অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ওই হাসপাতাল থেকে রেফার করে মির্জাপুর কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তিন দিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেন শম্পা আক্তার। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার পর থেকেই তার পেট ব্যথাসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। পেট ফুলে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হলে শম্পা আক্তারকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নেয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে শম্পার পেটে রক্ত মোছার গজ কাপড় ও সুই দেখা যায়। পরে ঐ হাসপাতালে গজ ও সুই বের করার জন্য পাঁচ বার অপারেশন করা হয়। এরপর কিছুটা সুস্থ অনুভব করলেও পরবর্তীতে আবার পেট ব্যথা শুরু হয় শম্পার।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসকের পরামর্শে পপুলার হাসপাতালের ধানমন্ডি শাখায় সিটি স্ক্যান করা হলে দেখা যায় আরও একটি সুই এবং কিছু গজ কাপড় রয়েছে শম্পার পেটে। দীর্ঘদিন বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সকালে শম্পাকে ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে পূনরায় চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ভর্তি করানো হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি চিকিৎসক কুহু মুৎসুদ্দী ও দেওয়ান ডিজিটাল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড নামক বেসরকারি হাসপাতালটির অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় পেটের ভেতর গজ ও সুই নিয়েই অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে প্রতিনিয়তই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে বেঁচে আছেন তিনি।
ভুক্তভোগী শম্পা আক্তার অশ্রু ঝড়া কন্ঠে তার দুই সস্তানকে নিয়ে বাঁচার আকুতি জানিয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিচারের দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে দেওয়ান ডিজিটাল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ইনচার্জ শাহিনূর ইসলাম জানান, আমদের হাসপাতালে আমরা নিয়ম অনুযায়ী সিজার করেছি। শম্পা আক্তারের বাচ্চাটি ম্যাচিউরড হওয়ার পূর্বেই সিজার করে ভূমিষ্ঠ হওয়ায় জন্মের পরের দিনই মারা যায়।গজ ও সুই রাখার বিষয়টি ডা: কুহু মুৎসুদ্দীই ভালো বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে অভিযুক্ত চিকিৎসক কুহু মুৎসুদ্দী জানান, আমার কাছে যত দিন ছিল সে পর্যন্ত সুস্থ ছিল। এখন তারা কোথা থেকে গজ-টজ এনে রেখেছে, সেটা তো আমি জানি না।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি চিকিৎসক কুহু মুৎসুদ্দীর ভুল চিকিৎসার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: লুৎফর রহমান আজাদ জানান, ইউএনও সাহেব আমাকে তদন্তের জন্য ইমেইল করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে তদন্ত বা বিচার করার এখতিয়ার তো আমার নেই।