রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী সংঘর্ষে রাবি রণক্ষেত্র (ভিডিও)

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে সাংবাদিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত ৮৬ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার ও রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। 

প্রথম দফায় শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুরর বাজারে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পালটাধাওয়া চলে। এদিন সংঘর্ষ, আগুন ও ইটপাটকেল এবং রাবার বুলেটের আঘাতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিনোদপুর বাজার। মসজিদে মাইকিং করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষে জড়ান স্থানীয়রা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট থেকে স্থানীয়দের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের ছত্রভঙ্গ করতে এ সময় রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। রাবার বুলেটের আঘাতে এ সময় অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। রাত দেড়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন। 

শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী সংঘর্ষে রাবি রণক্ষেত্র (ভিডিও)

এদিন স্থানীয়রা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীরের বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পালটা আক্রমণে রাবি শিক্ষার্থীরাও স্থানীয়দের লক্ষ্য করে প্রাচীরের ভেতর থেকে বাইরে ইটপাটকেল ছোড়েন। এছাড়া, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর পুলিশ ফাঁড়িসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচীর ঘেঁষে থাকা দোকানগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেন। এতে বিনোদপুর বাজারের আটটি দোকান সম্পূর্ণভাবে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটসংলগ্ন পুলিশ ফাঁড়ির আংশিক পুড়ে গেছে। দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ চলাকালীন পুলিশ রাবার বুলেটসহ গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।

সংঘর্ষের ঘটনায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম। এছাড়া একজন স্থানীয় আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শেখ ইউসুফ বাপ্পী, ইমরান, রেদওয়ান, হাসিব, সুরুজ, শাহীন, সমাপ্ত, ফুয়াদ, লিখন, মীর কাদীর, মিহাদসহ এ পর্যন্ত ৮৬ জন শিক্ষার্থী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে অনেকে ক্যাম্পাসে ফিরেছেন।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিনোদপুরসহ আশপাশের এলাকাগুলোর মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অনেক মেসের জানালায় স্থানীয়রা ইটপাটকেল ছোড়েন। শিক্ষার্থীদের বাইরে থেকে গালাগাল করা হয়। আবার একই ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চারুকলার গাছ ফেলে রেলপথ বন্ধ করে দেন।

প্রথম দফায় সংঘর্ষ চলাকালীন পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অনেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের সামনে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য তাদের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় উপাচার্য আজ ও আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন। যদিও ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া এদিন রাত সাড়ে ৮টায় ঘটনাস্থলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এসে উভয়পক্ষকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করেন। তার অনুরোধের পরও দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়।

জানা গেছে, বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামের বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে সিটে বসাকে কেন্দ্র করে গাড়ির চালক শরিফুল ও সুপারভাইজার রিপনের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয় আকাশের। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে এসে আবারও কন্ডাক্টরের সঙ্গে ঝামেলা বাধে। তখন স্থানীয় এক দোকানদার এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন ও স্থানীয় দোকানদারদের ওপর চড়াও হন।

বিষয়টি মীমাংসা করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ঘটনাস্থলে গেলে তার মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের হামলায় আহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আল জাবের আহমেদ বলেন, বাসের কন্ডাক্টর ও স্থানীয়দের হামলা থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে রক্ষা করতে ঘটনাস্থলে যাই। এ সময় তারা আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের অর্ধশতাধিক ছাত্র আহত হয়েছেন। আমরা সবাই হাসপাতালে এসেছি চিকিৎসা নিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা গেছে-মাথা, হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত নিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আবার অনেকে রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্যের বরাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঁচ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের পাশাপাশি প্রচুর সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য সব শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। গুলি ছোড়ার বিষয়ে জনসংযোগ প্রশাসক বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে পুলিশ প্রশাসন থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। তবে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ার বিষয়টি জেনেছি। আহতদের চিকিৎসার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেখা হচ্ছে।

এদিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিজিবি-১ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের বিনোদপুরে অবস্থান করছেন।

মতিহার থানার ওসি হাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি একটু ব্যস্ত আছেন বলে কল কেটে দেন।

এ বিষয়ে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনা জানার পরপরই সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

নগর পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কিছু টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। ছাত্ররা বেশ কয়েকটি দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker