টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সবজি ক্ষেতে অজ্ঞাত পোকার আক্রমণে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। হাল সময়ে ঢেঁড়স গাছের পাতায় সবুজ রঙের ছোট ছোট অজ্ঞাত প্রজাতির পোকার আক্রমণ হয়েছে। এ পোকা ঢেঁড়স গাছের পাতা খেয়ে ফেলছে এবং ঢেঁড়সে আক্রমণ করছে। ফলে আক্রান্ত ঢেঁড়স বড় না হয়ে বাঁকা হয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। এমন অজ্ঞাত পোকার আক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। এ কারণে কৃষদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে চাষাবাদের খরচ তোলা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
ভূঞাপুর উপজেলার কয়েড়া, নিকরাইল, নলুয়া, সিরাজকান্দি, বরকতপুর, বিলচাপড়া, রুহুলী ও চর নিকলা গ্রামে বিস্তর এলাকায় ঢেঁড়স আবাদ করা হয়েছে। তীব্র দাবদাহে প্রচন্ড খড়ায় ঢেঁড়স ক্ষেতের মাটি সাদা হয়ে গেছে। গাছ রঙ অর্থাৎ সবুজ রঙয়ের এক ধরনের পোকা ক্ষেতের ঢেঁড়স ছোট থাকতেই ছিদ্র করে ফেলছে। সবুজ গাছে ওই পোকার আক্রমণ হওয়ায় ঢেঁড়সের ফুল-পাকা সহ প্রচুর ঢেঁড়স ঝড়ে যাচ্ছে। এছাড়া বাঁকা হয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে কৃষকরা ওগুলো তুলে ফেলে দিচ্ছেন।
ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া পূর্বপাড়া গ্রামের কৃষক মো: আব্দুল বাছেদ প্রায় ২৫ শতাংশ জমিতে উন্নত জাতের কমল নামীয় হাইব্রিড ঢেঁড়স চাষ করেছেন। তার ক্ষেতে প্রচুর ঢেঁড়স ধরেছে এবং ফলন ভালো হওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত পোকার আক্রমণে লোকসানের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
কৃষক আব্দুল বাছেদ জানান, তার ক্ষেত থেকে একদিন পর পর ৬০ থেকে ৬৫ কেজি ঢেঁড়স তোলা যেত। কিন্তু পোকার আক্রমণে বর্তমানে ৪০ কেজি ঢেঁড়সও তোলা যাচ্ছেনা। এরমধ্যে ৫ থেকে ৭ কেজি ঢেঁড়স ফেলে দিতে হচ্ছে। অধিকাংশ ঢেঁড়স অজ্ঞাত পোকার আক্রমণের শিকার হয়েছে। এছাড়া ঢেঁড়সের গায়ে প্রচুর পরিমাণে দাগ দেখা দিয়েছে। ফলে পাইকারি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেও পোকা দমনে কার্যকর কোনো সুফল পাচ্ছেন না।
কয়েড়া গ্রামের ঢেঁড়স চাষী রহিম মিয়া, মীর বখশ আলীসহ অনেকেই জানান, তারা বাড়ির আঙিনায় ১০-১২ শতাংশ জমিতে ৩ হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে উন্নত জাতের হাইব্রিড ঢেঁড়স বীজ কিনে চাষ করেছেন। গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফলন এলেও পোকার আক্রমণে বড় হচ্ছেনা। বড় হওয়ার আগেই পোকার আক্রমণে বাঁকা হয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে।
কৃষকরা অভিযোগ করে জানায়, কৃষি অফিস থেকে মাঠ পর্যায়ে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। মোবাইল ফোনে অভিযোগ জানালে কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কখন আসেন আর কখন চলে যান- তা তারা জানেন না। এছাড়া হাট-বাজারে সারের দোকানগুলোতে গেলে দোকানিরা পোকা দমনের যেসব কীটনাশক ধরিয়ে দেন- সেগুলো দিয়ে পোকা দমন হচ্ছে না। এসব কীটনাশকের দামও দোকানিরা অতিরিক্ত নিয়ে থাকেন। অথচ কাজের কাজ কিছুই হয়না। দ্রæততম সময়ের মধ্যে পোকা দমন করতে না পারলে তারা ব্যাপক লোকসানে পরবেন।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেন জানান, মূলত: দাবদাহের কারণে এমনটা হচ্ছে। প্রচন্ড তাপমাত্রা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঢেঁড়স সহ অন্যান্য সবজিতে বিভিন্ন ধরনের পোকা-মাকড় বংশবিস্তার করছে। আবহাওয়া অনুকূলে এলে পোকার বংশবিস্তার এমনিতেই রোধ হবে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পোকা দমনে সকল ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.