সুনামগঞ্জ

টাঙ্গুয়ার হাওর ভাসছে প্লাস্টিক বর্জ্যে, চলছে ‘ডিজে পার্টি’

যতদূর চোখ যায় সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার ঈষৎ সবুজাভ পানিতে ভাসছে সাদা প্লাস্টিকের ওয়ানটাইম প্লেট, বোতল বা প্লাস্টিকেরই কোনো বর্জ্য।

সদ্য শেষ হওয়া কোরবানির ঈদের পর বেড়াতে এসে হাওরের জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ এ জলাভূমির এই হাল করে ছেড়েছেন ‘পর্যটকরা’- এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবিদদের।

তাই হাওরের প্রাণ-প্রকৃতি বাঁচাতে পর্যটকদের লাগাম টেনে ধরার দাবি তাদের; সেইসঙ্গে হাওর বাঁচাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন।

টাঙ্গুয়ার হাওর আন্তর্জাতিকভাবে ঘোষিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় ‘রামসার সাইট’। চলতি বন্যায় বানের পানিতে থৈ থৈ করা সুনামগঞ্জে ঈদের ছুটিতেও টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটক আসা বন্ধ হয়নি।

স্থানীয়দের ভাষ্য, দেশের নানা জায়গা থেকে আসা পর্যটকরা তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের প্লেট, বোতল, গ্লাস, পলিথিনসহ নানা ধরনের বর্জ্য ফেলছেন টাঙ্গুয়ার হাওরেই। একই সঙ্গে পর্যটকদের উচ্চ শব্দের ‘ডিজে পার্টিতে’ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা।

এলাকায় পর্যটকদের ‘উৎপাত’ বেড়েছে জানিয়ে হাওরপাড়ের গ্রাম জয়পুরের পরিবেশকর্মী আহমদ কবীর বলেন, “স্পিডবোট, ইঞ্জিন নৌকা, লঞ্চসহ ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের শব্দে ও পর্যটকদের ব্যবহৃত বর্জ্য হাওরের জলজ ও স্থলজ পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।“

এই পরিবেশকর্মী আরও জানান, বন্যার পানির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে তারা যাচ্ছেন, এর মধ্যে কোরবানির ঈদ পড়ায় দেশের নানা জায়গা থেকে এসেছেন পর্যটকরা।

“তারা (পর্যটক) মাইক নিয়ে এসে ডিজে পার্টি করছেন। উচ্চ শব্দে মাইক বাজাচ্ছেন। তাদের ব্যবহার্য প্লাস্টিকের অপচনশীল বর্জ্য ফেলে দিচ্ছেন হাওরে। যা এখন হাওরের ওয়াচ টাওয়ার, জয়পুর, গোলাবাড়ি, পাটলাই নদীসহ হাওরের বিভিন্ন স্থানে ভেসে ভেড়াচ্ছে”, অভিযোগ করেছেন এই পরিবেশকর্মী।

গোলাবাড়ি গ্রামের ব্যবসায়ী খসরুল আলম বলেন, “পর্যটকরা প্লাস্টিকের বোতল, প্লেইট, ওয়ান টাইম গ্লাস, পলিথিনের প্যাকেটসহ নানা ধরনের প্লাস্টিকের বর্জ্য অবাধে ফেলছেন হাওরে। এগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। আনন্দ উদযাপনের নামে এমন কাজ মেনে নেওয়া যায় না।”

টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের মন্দিআতা গ্রামের কৃষক আলী রেজা জানা কিছু ‘অসেচতন’ পর্যটক পরিবেশ নষ্ট করছেন হাওরে। হাওরের পরিবেশ নষ্টকারীদের জরিমানার আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন এই কৃষক।

গত দেড় দশক ধরে টাঙ্গুয়ার হাওর সংরক্ষণে যুক্ত সংস্থা সিএনআরএসের (সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ) কর্মকর্তা ইয়াহইয়া সাজ্জাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের অত্যাচার উদ্বেগজনক পর্যায়ে গেছে। এ বিষয়ে স্থানীয়রাও সচেতন নন।”
তার ভাষায় পুলিশ-প্রশাসন দিয়েও পর্যটকদের এই ‘অত্যাচার’ বন্ধ করা যাবে না। স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ‘নিয়ন্ত্রিত ইকো টুরিজম’ গড়ে তোলার পক্ষে এই কর্মকর্তা।

সেই সঙ্গে পর্যটকবাহী নৌকায় ‘ফি’ ধরা হলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে করেন ইয়াহইয়া সাজ্জাদ।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান কবীর বলেন, “আমরা এখনও ভয়াবহ বন্যার দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠতে পারেনি। এর মধ্যেই পর্যটকরা টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে আনন্দ-ফূর্তি করবেন এটা আমাদের কল্পনারও অতীত ছিল।”

তিনি আরও জানান, পর্যটকদের উচ্চশব্দে মাইক বাজানো এবং হাওরে অবাধে প্লাস্টিক বর্জ্য বন্ধে মঙ্গলবার থেকে হাওরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

“যারাই প্রকৃতিবিনাশী কাজ করবেন তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে”, বলেন ইউএনও।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button