মহাদেবপুর

কোটি টাকার প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না কৃষক

দেশের উত্তরাঞ্চলের খাদ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় প্রান্তিক কৃষকদের সবজি ও বোরো ধান চাষে বিনামূল্যে সেচ সুবিধার জন্য স্থাপন করা হয়েছিল সৌরচালিত পাতকুয়া। প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা ২৬টি পাতকুয়ার কোনোই সুফল পাচ্ছে না চাষীরা। সেচ সুবিধা না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে প্রকল্পের সুবিধাভোগী সদস্যরা। বিদ্যুতচালিত মর্টার বা ডিজেলচালিত শ্যালোমেশিন থেকে টাকা দিয়ে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাদের। কৃষকরা বলছে, পাতকুয়াগুলো কার্যকারিতা হারিয়েছে। এ প্রকল্পকে সরকারি অর্থ অপচয়ের অভিনব কৌশল হিসেবেই দেখছেন তারা। আর সংশ্লিষ্টরা বলছে, পাতকুয়াগুলো ভূ-পরিস্থ পানি সংরক্ষণ, সেচ কাজে ব্যবহার ও ভূ-গর্ভস্থ পানির রিচার্জ বৃদ্ধিতে সহয়তা করছে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নওগাঁ রিজিয়ন-২ এর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ‘পাতকুয়া খননের মাধ্যমে বরেন্দ্র এলাকায় স্বল্প সেচে ফসল উৎপাদন’ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ২৬টি পাতকুয়া নির্মাণ করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে শুরু হয়ে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রল্পের মেয়াদ শেষ হয়। প্রতিটি পাতকুয়া আড়াই হেক্টর জমিতে সেচ দিতে সক্ষম বলে দাবি বিএমডিএ’র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অধিকাংশ পাতকুয়া কার্যকারিতা হারিয়েছে। বছর যেতে না যেতেই পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায় এবং কয়েকটি একাধিকবার মেরামত করা হয়েছে। প্রকল্পে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের দাবি করা হলেও বাস্তবে এর কোন মিল পাওয়া যায়নি। প্রতিটি পাতকুয়ার জন্য সুফলভোগী কৃষকদের নিয়ে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, কমিটির সব সদস্য তো নয়ই, একটি পাতকুয়া থেকে দুইজন কৃষকও ঠিকমত পানি পায় না। এতে প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ গচ্চা যাচ্ছে বলেও অভিযোক করেন কৃষকরা।

উপজেলার নাটশাল মৌজায় সোহাগ মন্ডলের জমিতে একটি পাতকুয়া স্থাপন করা হয়েছে। সরেজমিন গিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোদ যতক্ষণ, পানি ততক্ষণ; রোদ শেষ, পানি শেষ। পাতকুয়া থেকে দুই বিঘা জমিতে পুরোপুরি সেচ দেয়া সম্ভব হয় না। এটি তৈরিতে যে টাকা খরচ হয়েছে সেই টাকা দিয়ে গভীর নলকূপ নির্মাণ করা যেত। একই এলাকার কৃষক আজাহার আলী বলেন, থালাবাসন ধোয়া এবং অজু-গোসল করার জন্য ভালো হয়। এটি দিয়ে চাষাবাদ করা সম্ভব নয়। উপজেলার চৌমাশিয়া এলাকার পাতকুয়া পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মাজেদুল ইসলাম বলেন, এতো টাকা ব্যয় করে মাত্র ১-২ বিঘা জমি আবাদ হবে এটা অযৌক্তিক। বিদ্যুতচালিত মর্টার দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন তিনি। হাতুড় ইউনিয়নের চকচকি এলাকার কৃষক সত্য রঞ্জন বলেন, চকচকি মৌজায় নির্মিত পাতকুয়ার কিছু যন্ত্রাংশ গত বৈশাখ মাসে চুরি হয়ে গেছে। এরপর থেকে সেচ সুবিধা বন্ধ রয়েছে। চেরাগপুর ইউনিয়নের মহেষপুর এলাকার পাতকুয়া পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সকিন পাহান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট ছিলো, কয়েকদিন আগে বরেন্দ্র অফিসের লোকজোন ঠিক করে দিয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নওগাঁ রিজিয়ন-২ (পত্নীতলা) এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মালেক চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের আওতায় থাকা কৃষকরা বিনামূল্যে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন। পাতকুয়ার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে অস্বীকার করেন তিনি। এই কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি পাতকুয়া সচল রয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, পাতকুয়াগুলো কৃষকের তেমন কোনো কাজেই আসছে না। মহাদেবপুর উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মিলন বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker