জামালপুর

সক্রিয় হয়ে ফের হুমকি: মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে ভিটেমাটি ছাড়া করার পায়তারা

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অসহায় এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিটেমাটি ছাড়া করার পায়তারা করছে প্রভাবশালী একটি পরিবার। বিষয়টি সমাধান করতে গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে মামলার আসামী হতে হয়েছে। 

বিবাদীরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর হামলার ঘটনায় করাগার থেকে সাজা ভোগ করে এসে এখন পুনরাই আবার হুমকি দিচ্ছে সেই পরিবারের উপর। সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের পিংনা দক্ষিণ পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

গত শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পিংনা দক্ষিণ পাড়া এলাকায় প্রায় শত বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জুট কর্পোরেশনে চাকুরীর সুবাদে নরসিংদীতে চলে যান তিনি। মাঝে মধ্যে এসে বাড়িঘরের খোঁজ নিতেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ। এ সুযোগে প্রতিবেশী মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে জুয়েল ও তার পরিবারের লোকজন ২০১২ সালে ওই মুক্তিযোদ্ধার বসতবাড়ি দখলের পায়তারা শুরু করেন। তখন থেকে প্রভাবশালী এ পরিবার নানাভাবে ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেন।

এক পর্যায়ে ২০১৩ সালে ওই মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি ঘরে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান প্রভাবশালী ওই পরিবার। হামলাকালে তাদের অস্ত্রের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয় বসতবাড়ি। গুরুতর আহত হন ওই মুক্তিযোদ্ধার ছোট ভাই মতিয়ার রহমান ও আব্দুল হাই। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৫ সালে আব্দুল হাই মারা যান। এর তিন বছর পর ২০১৮ সালে মতিয়ার রহমান মারা যান। বিষয়টি মিটিয়ে দিতে গিয়ে ওই প্রভাবশালী মোস্তাফিজুর রহমানের মামলার আসামী হতে হয়েছিল পিংনার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে।

ওই ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদের ভাতিজা আরিফুর রহমান ২০১৩ সালে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় পুলিশ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। আদালত তাদেরকে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ডসহ অর্থ দণ্ডাদেশ দেয়। সাজা ভোগের পর বাড়িতে ফিরে এসে ফের তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মামলা-হামলাসহ খুন করে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ বলেন, একশো বছর ধরে তারা একই বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। চাকুরীর সুবাদে তাকে নরসিংদীতে চলে যেতে হয়। এ সুযোগে প্রতিবেশী মোস্তাফিজুর রহমান ও তার পরিবারের লোকজন কয়েক দফা তার বাড়িঘরের হামলা-ভাংচুর ও মারধর করেন। এ সময় তার ছোট দুই ভাই গুরুতর আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। কারা ভোগের পর ফের তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এখন তারা মামলা, হামলা ও খুনের হুমকি দিয়ে আসছে।

এ ব্যাপারে সাবেক পিংনা ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার ছানোয়ার হোসেন ছানা বলেন, ২০১৩ সালে মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল ও তার পরিবারের লোকজন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদের বাড়িঘরের হামলা, ভাংচুর ও মারধরের ঘটনা ঘটায়। সে সময়ে বিষয়টি স্থানীয়দের নিয়ে মিটিয়ে দেওয়ায় চেষ্টা করা হলে উল্টো তাকেই জুয়েলের দায়ের করা মামলায় আসামী হতে হয়েছিল। 

এ-ঘটনায় মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘তার মা ওই জমিতে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ ও তার পরিবারকে থাকতে দিয়েছিলেন। এখন তাদেরকে চলে যেতে বলা হলেও তারা যাচ্ছে না ‘

এ-বিষয়ে তারাকান্দি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (উপ-পরিদর্শক) সরোয়ার হোসেন বলেন, এখনো কোন অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker