নড়াইলের দিঘলিয়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর-দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও মন্দিরে হামলা এবং আগুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার এক যুবকের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বিকেলে নড়াইল সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোরশেদুল আলমের আমলি আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
ওই যুবকের নাম রোমান মোল্লা। তার বাড়ি কুমড়ী গ্রামে। সে দিঘলিয়া নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১৫ জুলাই) ফেসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে ইসলাম ধর্ম অবমাননার ‘কথিত অভিযোগ’ তুলে নড়াইলের লোহাগড়ার দিঘলিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়ি, দোকান, মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় রোববার রাতে লোহাগড়া থানার এসআই মাকরুফ রহমান বাদি হয়ে আড়াইশ অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন। রোববার অভিযান চালিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এদিকে বাড়িঘর- দোকান-মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পদক্ষেপ, নিরাপত্তার আশ্বাসেও আতঙ্ক কাটছে না সেখানকার হিন্দুদের। অনেকে এখনও এলাকাছাড়া। বিশেষ করে অনেক নারী এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বসতবাড়ি ও হামলার শিকার মন্দির মেরামতের কাজ শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়রা জানান, দিঘলিয়া গ্রামে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার বাস করে। এর মধ্যে বাজারের পাশেই সাহাপাড়ায় শতাধিক হিন্দু পরিবার যুগের পর যুগ ধরে বসবাস করে এলেও কোনোদিন তারা এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হননি। কিন্তু শুক্রবারের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা তাদের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে।
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফিও আক্ষেপ করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছেলেবেলা থেকে যে নড়াইলকে দেখে এসেছি, যে নড়াইলকে নিয়ে আমরা গর্ব করি, সেই নড়াইলের সঙ্গে এই নড়াইলকে আমি মেলাতে পারছি না।’
অপরদিকে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) সকাল থেকেই ব্যস্ত ছিলো নড়াইল প্রশাসন। সকালে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পর স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন।
দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন ধর্ম ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। সাথে ছিলেন সনাতন ধর্মের নেতরা। এ সময় তিনি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত শুনেন এবং কথা বলেন স্থানীয়দের সঙ্গে।