টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে প্রসূতি হেটে ঢুকলেন অপারেশন থিয়েটারে- ফিরলেন লাশ হয়ে

আব্দুস সাত্তার, প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল:

প্রসূতি মীম আক্তার হাটতে হাটতে ঢুকলেন হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে। এর মাত্র ২০ মিনিট পরই মীম আক্তার ও তার নবজাতকের লাশ বের করে দেন চিকিৎসক। এ নিয়ে তুমুল হট্টগোলের মধ্যে সমানতালে চলছে আহাজারি। বুক ফাঁটা কান্নায় ভেঙে পরছেন কেউ কেউ। স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতাল প্রাঙ্গণের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় মা ও নবজাতক মেয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে হাসপাতালের ১ নম্বর অপারেশন থিয়েটারে মৃত্যুর ওই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর অপারেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা: সালমা জাহান ও হাসপাতালের চলতি দায়িত্বে থাকা সিনিয়ার কনসালটেণ্ট ডা: প্রনব কর্মকার গা-ঢাকা দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সিঙ্গুরিয়া গ্রামের হানিফ আলীর মেয়ে মীম আক্তার। তার স্বামী মো: জাহাঙ্গীর হোসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মদনা গ্রামের বাসিন্দা। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে ঢাকায় একটি গার্মেণ্টস ফ্যাক্টরিতে পোষাক শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। প্রসব বেদনা উঠায় মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। গাইনী বিভাগের জুনিয়ার কনসালটেণ্ট ডা: সালমা জাহান তার অপারেশন করেন। অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার ২০ মিনিট পরই মা ও নবজাত কন্যার মরদেহ বের করে দিয়ে সটকে পড়েন ওই চিকিৎসক।

স্বজনরা অভিযোগ করেন, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের গাইনী বিভাগের জুনিয়ার কনসালটেণ্ট ডা: সালমা জাহান তাদেরকে শহরের সোনিয়া নার্সিং হোমে প্রসূতি মীম আক্তারের অপারেশন করাতে বলেন। তারা হতদরিদ্র হওয়ায় এ প্রস্তাব মেনে না নেওয়ায় ওই ডাক্তার সিজারিয়ান অপারেশনের সময় অবহেলা করায় মা ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। তাদের আরও অভিযোগ, প্রসূতি মীম আক্তার হাটতে হাটতে অপারেশন থিয়েটারে যান। অথচ অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার ২০ মিনিটের মাথায় প্রসূতি মা ও নবজাতকের লাশ বের করে দেওয়া হয়।

নিহত গৃহবধূ মীম আক্তারের নানী সুমনা আক্তার জানান, মঙ্গলবার সকালে প্রসূতি মীম আক্তারের প্রসব বেদনা ওঠে। তাৎক্ষণিক তারা তাকে ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর (রেফার্ড) করেন। পরে ওই দিনই দুপুর ১২টার দিকে প্রসূতি মীম আক্তারকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের গাইনী বিভাগের জুনিয়ার কনসালটেণ্ট ডা: সালমা জাহানের তত্ত্বাবধায়নে দুপুর ১ টায় প্রসূতিকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার ২০ মিনিট পর ওই ডাক্তার মীমের পরিবারের কাছে তার জন্য দুই ব্যাগ রক্ত চান। স্বজনরা রক্ত সংগ্রহের জন্য হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটে ছুটাছুটি করতে থাকে। এ সময় অপারেশন থিয়েটার থেকে জানানো হয়- প্রসূতি মীম আক্তার ও তার নবজাতক কন্যা সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। ওই সময় গাইনী বিভাগের জুনিয়ার কনসালটেণ্ট ডা: সালমা জাহানের খোঁজ করলে তিনি চলে গেছেন বলে জানানো হয়।

আহাজারি করতে থাকা নিহতের খালা মাজেদা আক্তার জানান, প্রসূতি মীমের মৃত্যুর পর জোর করে হাসপাতালের দুজন নার্স-ওয়ার্ডবয় লাশের ছাড়পত্র কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে মা ও নবজাত মেয়ের মরদেহ বের করে দেয়। এসময় হাসপাতালের নার্স ও ওয়ার্ড বয়দের সঙ্গে নিহতের স্বজনদের হাতাহাতি হয়।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেণ্ট (গাইনী) ডা: সালমা জাহান মুঠোফোনে বলেন, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: সাদিকুর রহমান ঢাকায় থাকায় তিনি গণমাধ্যমে কোন ধরণের বক্তব্য দিতে পারবেন না। এরপরই তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের চলতি দায়িত্বে থাকা সিনিয়র কনসালটেণ্ট (কার্ডিওলজি) ডা: প্রনব কর্মকারের খোঁজ করলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়- তিনি অনেক আগেই কর্মস্থল থেকে বের হয়ে গেছেন। ডা: প্রনব কর্মকারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা: মো: মিনহাজ উদ্দিন মিয়া জানান, জেনারেল হাসপাতালের বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: সাদিকুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রির্পোটের ভিত্তিতে তিনি প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker