টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইল-৬ আ’লীগের সাংসদ টিটুতে ভরাডুবি:

লাবু খন্দকার, বিশেষ প্রতিনিধি:

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন তফসিল ঘোষণা হলেও নাগরপুর-দেলদুয়ার এর আসনে বিএনপির প্রার্থী দলীয় সরকার এর অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় কাটছে না। 

Image
সংসদ সদস্য টিটু

এ আসনের সাংসদ টিটু বিগত দিনে উন্নয়ন ও সরকার দলীয় কর্মকান্ডে আ’লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈরী ভাব থাকায় ভোটের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছেন। ভোট যুদ্ধে নিশ্চিত ভরাডুবি ঘটবে সাংসদ টিটুকে দিয়ে, এমনটি বলছেন নাগরপুর-দেলদুয়ার এর আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন নেতা-কর্মীবৃন্দ।

তারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন না হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেকায়দায় পড়বে। তাই কোন্দল নিরসন ও জনপ্রিয় প্রার্থী নিয়ে আসতে হবে। বিগত দিনে সংসদ নির্বাচনগুলোতে এ আসনে আওয়ামী লীগ বিজয়ের রেকর্ড সংখ্যাধিক্য নয়। তুলনামূলকভাবে বিএনপি এখানে শক্তিশালী ভূমিকায় ছিল। এখানে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তন্মধ্যে- রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ দলীয় নীতিনির্ধারকদের ইঙ্গিত-দৃষ্টি রয়েছে যাদের দিকে, তারা হলেন- সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট তারানা হালিম, নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো: জাকিরুল ইসলাম উইলিয়াম। 

তাছাড়া, এ আসনের সাংসদ আহসানুল ইসলাম টিটুর আ’লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার কারণে বিচ্ছিন্নতায় পড়ে গেছেন তিনি। যা মনোনয়ন ও ভোটের ক্ষেত্রে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য। তবে এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর রয়েছেন। জনপ্রিয় প্রার্থী ছাড়া  দলীয় মনোনয়ন নয়, এটা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ঘোষণা।

দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ও দলীয় নেতাদের রেষারেষি নিয়ে মুঠোফোনে প্রশ্নকালে সাংসদ টিটু কোনো উত্তর দেন নি।

তফসিল ঘোষণা হলেও বিএনপির নির্বাচন নিয়ে সংশয় কাটছে না। এ আসনে বিএনপি কিংবা বিরোধী দলের যারাই হোক তাদের মধ্যে এটা ভাবার বিষয়। 

বিএনপির প্রার্থীরা গ্রেফতার, আতঙ্ক এড়াতে অপরিচিত, অনেক ক্ষেত্রে পরিচিত জনদের কল করা মোবাইল রিসিভ করছে না। এজন্য নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা না করা নিয়ে তেমন মন্তব্য নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট তারানা হালিম দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। দুই উপজেলায় সভা সমাবেশ করছেন। 

Image
তারানা হালিম

সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানান, ‘নেত্রী বলেছেন-শত ফুল ফুটতে দাও। আমি সবচেয়ে সুন্দর ফুলটি বেছে নেব-অর্থাৎ তিনি সৎ, যোগ্য, কর্মীবান্ধব, জনপ্রিয় দলের প্রতি অনুগত, পরীক্ষিত এবং যার বিজয়ী হবার সম্ভাবনা অধিক; এমন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবেন। গত দশ বছরের বেশী সময় ধরে প্রতিনিয়ত কাজ করে গেছি, দেলদুয়ার-নাগরপুরের তৃণমূল, সাধারণ মানুষ আমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসে। আমাকে এমপি হিসেবে দেখতে চায়, এই প্রাপ্তি কম নয়। আমি নমিনেশন পাবার ক্ষেত্রে আশাবাদী। তবে নেত্রী যাকে যোগ্য মনে করেন তাকেই নৌকা প্রতীক দেবেন এবং নৌকাকে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বিজয়ী করবো, ইনশাআল্লাহ।’

নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাকিরুল ইসলাম উইলিয়াম নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে রাখছেন। পাশাপাশি, তিনি দেলদুয়ার উপজেলায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের আস্থাভাজন তিনি। তাদের প্রত্যাশা দীর্ঘদিনের, দলীয় নীতি-নির্ধারকদের এবার দৃষ্টি তারই দিকে পড়বে।

Image
জাকিরুল ইসলাম উইলিয়াম

এদিকে, দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী নাগরপুর থানা আ’লীগ সভাপতি, হেভিওয়েট ও ক্লিনইমেজ  মো: জাকিরুল ইসলাম উইলিয়ামকে মনোনয়ন সংক্রান্ত প্রশ্নকালে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ‘আমি রাজনীতি করি প্রকৃতপক্ষে মানুষের কল্যাণের জন্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যেমন করে গেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদা দেশের মানুষের কল্যাণে ব্যস্ত থাকেন। নাগরপুর-দেলদুয়ার এর দলীয় নেতা-কর্মী, সহযোগী সংগঠন এর ত্যাগী ব্যক্তিরা  পাশে রয়েছেন। এ দুই উপজেলার প্রানের মানুষগুলোর সাথে  পথচলা, তারা প্রাণের স্পন্দন। আমি বাস্তবিক রাজনৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করেছি, আমার পরিবার অভিভাবক-স্বজনদের দেখে। তারা ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক।

ঐক্য  গড়ে নাগরপুর-দেলদুয়ার এর আওয়ামী লীগের ঘাটিতে ইনশাল্লাহ নৌকার বিজয় ঘটাব। আমি বিশ্বাস করি, এবার দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেবেন। কারণ, নাগরপুর-দেলদুয়ারবাসী আমাকে চাচ্ছে। পিছিয়ে পড়া নাগরপুর-দেলদুয়ারবাসীর স্বপ্নপূরণে কাজ করে যাব অবিরাম। এটা প্রমাণ করব যে, নৌকা মানে উন্নয়ন, দেশ ভাবনা ও বাস্তবিকই দেশ গঠন।’

জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তারেক শামস হিমু দুই উপজেলায় সমাবেশ-প্রচারণা চালালেও তিনি এখন আর মনোনয়ন প্রত্যাশী নন। তিনি মুঠোফোনে জানান, আমি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। তবে দলীয় মনোনয়ন চাইবনা। যদি নেত্রী দেয়, সেটা আলাদা ব্যাপার বলেও জানান তিনি। 

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার রেজা-ই- রাকিব জানান, ‘২০১৭ সাল থেকে আনুমানিক ৫০টি মসজিদ এবং প্রায় ২০টি মাদ্রসা ও এতিমখানার উন্নয়ন কাজে নিজস্ব তহবিল থেকে নগদ অর্থ সহায়তা করেছি।

করোনা মহামারীতে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে দুই ধাপে নাগরপুর দেলদুয়ারের ৩ হাজার পরিবারকে ১৫ দিনের খাদ্য সামগ্রী সহায়তা প্রদান, নাগরপুর-দেলদুয়ারের ২০ টি ইউনিয়নে আওয়ামিলীগ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি।

আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ঈদ-উল-ফিতরে নাগরপুর দেলদুয়ারের ৩০০০ দুস্থ পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী প্রদান ও ঈদ উল আযহা তে আওয়ামিলীগ নেতাকর্মীদের মাধ্যমে অসহায় দুস্থ মানুষের মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয়েছে।

Image
ব্যারিস্টার রেজা-ই-রাকিব

এমনকি, দেশের স্বার্থে বিটিআরসি এর লিগ্যাল এডভাইজার হিসেবে ২০০৯ সাল থেকে গ্রামীণফোনসহ অন্যান্য কোম্পানি থেকে মামলা জিতে রাস্ট্রীয় কোষাগারে প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকা ফেরত প্রদান করা হয়েছে।

বিটিআরসি এর লিগ্যাল এডভাইজার হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হতে সরকার বিরোধী আল-জাজিরার ভিডিও কন্টেন্ট অপসারণ ও বিটিআরসি এর লিগ্যাল এডভাইজার হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হতে তারেক জিয়ার বক্তব্য অপসারণ করা হয়েছে এবং ২০১২ সাল থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এর সাথে ফ্রান্স, রাশিয়া এবং আমেরিকার সাথে চুক্তি সম্পন্ন করে স্যাটেলাইট -১ এর সফল উৎক্ষেপন এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট – ২ বস্তবায়নের লক্ষে কাজ করেছি।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেবেন। ইনশাল্লাহ সকল নেতা-কর্মী ও নাগরপুর-দেলদুয়ারবাসীকে সাথে নিয়ে নৌকা প্রতীকের বিজয় ঘটিয়ে উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখব।’

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যার যার অবস্থান থেকে কেন্দ্রে লবিং, এলাকায় সমাবেশ-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

তন্মধ্যে- কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি এটিএম কাজী আনিসুর রহমান বুলবুল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার রেজা-ই-রাকিব মুন্না, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়াড় খুরশিদ আলম বাবুল, ব্যারিস্টার এম আশরাফুল ইসলাম,  ঢাকাস্থ টাঙ্গাইল জেলা যুব সমিতির সহ-সভাপতি খন্দকার আছাব মাহমুদের নাম দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে শোনা যাচ্ছে। 

এদিকে, আওয়ামী লীগের কোন্দল ও দলীয় নেতাদের রেষারেষির সুযোগ নিতে চায় বিএনপি। হারানো আসন পুনরুদ্ধারে আগে থেকেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক এর দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তবে চোখ-কান খোলা রেখে সজাগ ভূমিকায় রয়েছে তারা।

বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী নূর মোহাম্মদ খান এই আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি আন্দোলনের পাশাপাশি এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগও করেছেন।

এছাড়া, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি রবিউল আওয়াল লাভলু, কেন্দ্রীয় জাসাসের অর্থবিষয়ক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম স্বপন, নাগরপুর সরকারি কলেজের সবেক ভিপি শরীফ উদ্দিন আরজু, নাগরপুর উপজেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন খান ও নগরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ছাত্রনেতা মীর আবুল কালাম আজাদ রতন।

তাছাড়া, জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠণিক সম্পাদক মামুনুর রহিম সুমন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপরতা চালাচ্ছেন। 

টাঙ্গাইল-৬ আসনের নাগরপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে মোট ভোটার দুই লাখ ২৯ হাজার ২৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ১৩ হাজার ৬৭৯ এবং নারী ভোটার এক লাখ ১৫ হাজার ৫৮২ জন। দেলদুয়ার উপজেলার আট ইউনিয়নে মোট ভটার এক লাখ ৭১ হাজার ৯০৯। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৬ হাজার ২৪৬ ও নারী ভোটার সংখ্যা ৮৫ হাজার ৬৬৩ জন। এ উপজেলায় একজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারও রয়েছেন।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker