কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পরিবেশ এবং প্রকৃতিতে গুই সাপের দেখা খুব একটা মিলছেনা। দিনদিন এর সংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্যের উপর এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, কটিয়াদী বাজার হাসপাতাল রোডের পুরাতন পৌরসভা সংলগ্ন ডুবাতে কয়েকটি গুই সাপের দেখা মেলে।
এ ছাড়া কালো রঙের গুই সাপ মাঝেমধ্যে হাতে গোনা দু-একটি দেখা যায়। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই প্রাণীটিকে গুই সাপ বলা হলেও এটি গিরগিটি প্রজাতির প্রাণী। আবাসস্থল,খাদ্য সংকট,ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের প্রিয় খাবার,কবিরাজদের ওষুধ তৈরি,চামড়া দিয়ে ভ্যানিটি ব্যাগসহ বিভিন্ন ব্যবহার্য পণ্য তৈরিসহ নানা কারণে এই প্রাণী বিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এই বিপন্নের পেছনে মূলত মানুষই দায়ী বলে মনে করেন প্রাণী ও পরিবেশবিদরা। গুই সাপ ৪ ফুট থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত দৈর্ঘ্য হতে পারে। ওজন ৫ কেজি থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত হয়। এরা সাঁতরাতে ও গাছে উঠতে খুব পটু। গুই সাপ মাটির গর্তে,উইটিবি,গাছের কোটরে বা ফাটলে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
কিন্তু তাদের আবাসস্থানগুলো আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারছে না। সাধারণত এ সাপ ক্ষতিকর পোকামাকড়,কাঁকড়া,শামুক,ইঁদুর,পচা-গলা প্রাণীদেহ,ব্যাঙ ও পাখি ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে। সুযোগ পেলে হাঁস-মুরগিও এদের খাবারে পরিণত হয়।
বাংলাদেশের ১৯৭৪ [২] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। গুই সাপ চোখে পড়ে হাওড় ও বিলের আশেপাশে। গুই সাপ মূলত গর্তবাসী প্রাণী। মাটির গর্ত,উইঢিবি,গাছের কোটর ও ফাটলে এরা বাস করে। পানিতেও দেখা যায়। এরা সাঁতার কাটতে ও গাছে উঠতে পারে। বিষধর সাপ ও ক্ষতিকর পোকামাকড় এদের প্রিয় খাদ্য। অন্যান্য খাদ্যের মধ্যে রয়েছে- এদের প্রধান খাদ্য কাঁকড়া,শামুক, ইঁদুর,পচা-গলা প্রাণীদেহ ও উচ্ছিষ্ট। বড় গুই সাপ মাছ,সাপ,ব্যাঙ ও পাখি খায়। তারা ছোট কুমির,কুমিরের ডিম ও কচ্ছপও খায়। ছোটসাপ,ব্যাঙ,ইদুর,মাছ,কেঁচো,শামুক,কাঁকড় ইত্যাদি। সুযোগ পেলে হাঁস-মুরগির ছানা ও ডিমে হানা দেয়।
ইসাপ খুবই নিরীহ প্রাণী মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়। তারা অতি উপকারী প্রাণী। বিষধর সাপ ও ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে আমাদের উপকার করে। ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুই সাপের ভূমিকা অতূলনীয়। এরা খাদ্যশৃঙ্খলে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এদের সংখ্যা হ্রাস পেলে প্রধান খাদ্য পোকামাকড়রে সংখ্যা বেড়ে যাবে,ইদুরের উৎপাত বেড়ে যাবে,অনুকূল পরিবেশ হবে বিষাক্ত সাপের। যা পরিবেশ ও মানুষের জন্য মোটেও সুখকর নয়। ফসলের জমিতে পোকামাকড় দমনের জন্য ব্যবহার করা হয়। উচ্চমাত্রার কীটনাশক,ফলে অনেক উপকারী অনুজীব ধ্বংশ হয়।
হাওর অঞ্চলের পরিবেশ সচেতন ও সংবাদকর্মী মো: ফরিদ রায়হান বলেন,সকল প্রাণি মিলেইত আমাদের প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। একটির সাথে অন্যটির সামঞ্জস্যপূর্ণ বসবাসই মঙ্গল, কোন প্রাণী বিপন্ন হয়ে গেলে তার প্রভাব পরিবেশে পড়বেই। এদের রক্ষা করা না গেলে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এই প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষায় সরকার ও জনগণকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: উসমান গনী বলেন, গুই সাপ এখন কমে যাচ্ছে। এগুলো দেখলে মেরে ফেলা ঠিক নয়। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টি করে অবাধ শিকার বন্ধ করতে হবে।
উপজেলা বন কর্মকতা হারুন অর রশীদ বলেন,খাদ্য সংকট ও উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে গুই সাপ বিলুপ্ত হচ্ছে। এই খবরটি সুখকর নয় আমাদের জন্য। মানুষ যাতে গুই সাপ না মেরে ফেলে এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.