নোয়াখালী

কলেজছাত্রকে মাদক কারবারি সাজিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

নোয়াখালীতে ইয়াবা কারবারি সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে কলেজছাত্রকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে।

গত ২৬ জুলাইয়ের এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কলেজছাত্র শামীম আহাম্মদের পিতার দায়ের করা মামলায় পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

অপরদিকে পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে পুলিশ সদস্য হলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা গেছে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কাজীনগর গ্রামের সাবেক পুলিশ সদস্য বদিউল আলমের ছেলে নোয়াখালী সরকারী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শামীম আহাম্মদ। পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়ির পাশে কাজীনগর রাস্তার মাথায় একটি কনফেকশনারি দোকান দিয়ে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।

এরই সূত্র ধরে এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে আসা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই সাইদ মিয়া ও এএসআই সাকিদুল ইসলামের সঙ্গে শামীমের পরিচয় হয়।

ভুক্তভোগী শামীম আহাম্মদ ও তার পরিবারের ভাষ্যমতে, গোয়েন্দা পুলিশের ওই সদস্যরা পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে শামীমকে সোর্স হিসেবে কাজ করতে বললে শামীম রাজি হন। এরপর শামীমের তথ্যে মাদকবিরোধী একাধিক সফল অভিযানও পরিচালনা করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

কিন্তু বিপত্তি বাধে গত ২৬ জুলাই একটি অভিযানে। ওই দিন ডিবি পুলিশের দেয়া ২০ হাজার টাকা নিয়ে শামীম ও তার এক সহযোগী সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভার পারভেজসহ ইয়াবার ক্রেতা সেজে জেলার হরিনারায়নপুর এলাকায় এক মাদক কারবারির কাছে যান।

এসময় শামীম মোবাইলে ও হোয়াটসঅ্যাপে এসআই সাইদ মিয়া ও এএসআই সাকিদুল ইসলামকে ইয়াবা ক্রয়-বিক্রয়ের ঠিকানা দিলেও তারা যথাসময়ে পৌঁছাতে না পারায় ইয়াবা বিক্রেতাকে আটক করতে ব্যর্থ হন।

তবে পুলিশ আসার আগেই বিক্রেতা শামীমের বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে ২০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ১৪০ পিস ইয়াবা দিয়ে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে।

মাদক কারবারিকে ধরতে না পেরে ক্ষিপ্ত এসআই সাইদ মিয়া ও এএসআই সাকিদুল ইয়াবা কারবারির রেখে যাওয়া ১৪০ পিস ইয়াবাসহ শামীম ও তার সহযোগী পারভেজকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।এরপর শামীমের পরিবারের সদস্যদের কাছে মাদকসহ শামীমকে আটক করার খবর দেন তারা।

খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক শামীমের মা-বাবা ও বড় ভাই ডিবি অফিসে ছুটে যান। এ সময় তাদের সামনে শামীমকে নির্যাতন করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে প্রথমে এক লাখ ও পরে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। যার অডিও কল রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীর।

ওই দিন রাতে শামীমের পিতা এসআই সাকিদুলের হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দিলে তিনি আরও ২০ হাজার টাকা নিয়ে সকালে এসে শামীমকে নিয়ে যেতে বলেন। সকালে শামীমের পিতা আরও ২০ হাজার টাকা নিয়ে ডিবি অফিসে গেলে টাকা না নিয়ে আগের ২০ হাজার টাকার থেকে ১০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে শামীম ও তার সহযোগী পারভেজকে মাদক মামলায় জেলে পাঠান।

প্রায় দেড় মাস শামীম জেল খেটে জামিনে এসে অভিযোগ করে বলেন, ডিবি কার্যালয়ে তাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করা হয়।

এদিকে, নিরপরাধ শামীমকে মিথ্যা মাদক মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ন্যায়বিচার চেয়ে নোয়াখালী টিভি সাংবাদিক ফোরাম কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে করেন শামীমের পিতা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য বদিউল আলম।

তিনি জানান, আদালতে ডিবি পুলিশের ছয় সদস্য এসআই সাইদ মিয়া, এএসআই সাদিকুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলাম, জাহেদুল ইসলাম, পুলিশ সদস্য সেলিম মিয়া ও শামছুদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলে আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

শুধু শামীম ও তার পরিবারের সদস্যরাই নয়, জেলা ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে আরও অনেক অপকর্মের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে জানতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে গেলে অভিযুক্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্ত যেই হোক আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker