চট্টগ্রাম

চাহিদার অর্ধেক পেঁয়াজ কিনছে ক্রেতারা

‘পেঁয়াজের কেজি কত?’ বিক্রেতার জবাব, ‘এক দাম ১২০ টাকা; ১১৯ টাকাও হবে না।’ ক্রেতা অবাক হয়ে বললেন, ‘খাতুনগঞ্জে তো ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। আপনি বড়জোর ১০০ টাকা চাইতে পারেন।’ বিক্রেতা বললেন, ‘খাতুনগঞ্জে গিয়ে কেনেন।

আমার ভ্যান থেকে কিনতে আসছেন কেন?’ ক্রেতা অনেক দরদাম করার পরও দাম কমাতে না পেরে এক কেজির বদলে আধাকেজি কিনে বাড়ির পথ ধরলেন।

এই দৃশ্য গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর বাদুরতলা এলাকার। ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে পেঁয়াজ, আদা ও রসুন বিক্রেতা মো. আবদুর রহিমের ভাষ্য, ‘আমি এক সপ্তাহ আগে খাতুনগঞ্জ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছি। আমার ভ্যানভাড়া আছে, বস্তার মধ্যে অনেক পেঁয়াজ পচে থাকে।

সব মিলিয়ে ১২০ টাকার কমে বিক্রি করতে পারব না।’ তিনি বলেন, ‘অবরোধের পর থেকে অনেকেই আড়াই শ গ্রাম পেঁয়াজও কিনতে আসে। আগে যারা এক থেকে দুই কেজি নিত, তারা এখন নিচ্ছে আধাকেজি।’

ক্রেতা আলমগীর হোসেনের দেওয়া (পেঁয়াজের কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা) তথ্য যাচাই করতে দেশের বৃহৎ ভোগ্য পণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ দিন আগে পাইকারিতে রসুনের দাম ছিল মানভেদে প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা।

এখন সেটা ১৩৮ টাকায় নেমে এসেছে। প্রতি কেজিতে কমেছে ১২ থেকে ১৭ টাকা। একই ভাবে মানভেদে ২০০ থেকে ২১০ টাকার প্রতি কেজি আদা এখন বিক্রি করা হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। কেজিতে কমেছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এদিকে ভারত সরকার রপ্তানি শুল্ক টনে ৪০০ থেকে ৮০০ ডলার ঘোষণা করার পর সে দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দর উঠেছিল পাইকারিতে ১০০ থেকে ১১০ টাকা।

ক্রেতার সংকটে এখন পণ্যটির দাম কমছে। এখন পাইকারি বাজারে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তিন দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের কমিশন এজেন্টভিত্তিক ব্যবসায়ী মারুফ হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি প্রতি কেজি পণ্য বিক্রি করে পাই ৭০ পয়সা। অন্যান্য দিন ৮০ হাজার কেজি পণ্য বিক্রি করলেও এখন ৪০ হাজার কেজির বেশি বিক্রি করতে পারছি না। দাম কমানোর পরও ক্রেতা নেই।’

খাতুনগঞ্জে কাঁচাপণ্যের কমিশন এজেন্ট ও এসএন ট্রেডার্সের মালিক আলী হোসেন খোকন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যারা হরতাল-অবরোধে বাড়তি কাঁচাপণ্য আড়তে মজুদ করেছে, তাদের এখন ক্রেতাসংকটে লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ ছাড়া এসব কাঁচাপণ্য বেশিদিন মজুদ করে রাখা যায় না।’

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খাতুনগঞ্জে বাজারদর প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে। তবে দুই দিন ধরে বাজারে ক্রেতাসংকট দেখা দিয়েছে। মূলত পেঁয়াজের বাড়তি দাম থাকায় অনেক খুচরা বিক্রেতা পণ্যটি সংগ্রহ করছেন না। এর প্রভাব পড়েছে আদা-রসুনের বাজারেও।

হরতাল-অবরোধের কারণে কি ক্রেতা আসছে না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক আছে। প্রতিদিন খাতুনগঞ্জে আদা, রসুন ও পেঁয়াজ বোঝাই ২০ থেকে ৩০টি ট্রাক প্রবেশ করছে। আড়তে পণ্য আসছে, কিন্তু ক্রেতা আসছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker