কুমিল্লার বুড়িচংয়ে চোর বলায় দুই শ্রমিকের মাঝে ঝগড়ার জেরে এক শ্রমিককে হত্যা করে তার মরদেহ মাটি চাপা দিয়েছেন অপর শ্রমিক। পুলিশ বুড়িচং উপজেলার দুর্গাপুর এলাকার একটি ডোবা থেকে মো. মনজুরুল ইসলাম (২৬) নামের ওই শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মো. মোস্তাকিন মিয়া বাদী হয়ে বুড়িচং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
ঘটনাটি গত শুক্রবারের হলেও লাশটি পুলিশ উদ্ধার করে সোমবার (১৬ জানুয়ারি) মধ্যরাতে।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহ একজনকে আটকের পর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশকে লাশের সন্ধান পায়।
নিহত যুবক রংপুরের বদরগঞ্জ থানার আলা মিয়ার ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম (২৬)। আটক যুবক রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার মো. নাহিদ (১৮)।
স্থানীয়রা জানায়, মঞ্জুরুল একটি ফার্মে ও নাহিদ লেবারের কাজ করতো। বুড়িচং উপজেলার দুর্গাপুরের নোয়াপাড়া এলাকার তারা ভাড়া থাকতেন। বেশ কিছুদিন আগে মঞ্জুরুলের পকেট থেকে ১৫০০ টাকা পাওয়া যাচ্ছিলো না। তাই মঞ্জুরুল সরাসরি নাহিদকে চোর দাবি করে এবং সে স্থানীয়দের কাছে এ ঘটনা বলে। নাহিদের বাবা-মাকেও কল দিয়ে জানায় মঞ্জুরুল। এতে নাহিদ ক্ষিপ্ত হয়।
পরে গত শুক্রবার রাতে মঞ্জুরুলের ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে মাথায় দাঁ দিয়ে ছয়টি কোপ দিয়ে হত্যা করে নাহিদ। পরে তার লাশ কাবিলা এলাকার একটা কবরস্থানের পাশে মাটিতে পুঁতে ফেলেন তিনি৷
পুলিশ জানায়, বিতণ্ডার শুরু বেশ কিছুদিন আগে থেকে। গতকাল বিকেলে আমাদের কাছে জিডি নিয়ে আসে নিহত মঞ্জুরুলের ভাই। পরে পুলিশ নিহতের রুমমেট নাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার বিস্তারিত পুলিশকে জানায় সে। নাহিদ স্বীকার করে চোর বলাকে কেন্দ্র করেই তিনি এ ঘটনায় ঘটিয়েছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, রংপুর জেলার বদরগঞ্জ থানার সন্তোষপুর গ্রামে আলাউদ্দিনের ছেলে মনজুরুল ইসলাম বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের দূর্গাপুর নোয়াপাড়া এলাকার আক্তার হোসেনের গরুর ফার্মে থাকতেন। মনজুরুল ইসলাম দিনের বেলায় দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে মানুষের বাড়িতে কৃষি কাজও করতেন।
গত ১৩ জানুয়ারি রাতের পর পরিবারের সদস্যরা মনজুরুল ইসলামের সাথে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি শেষে ১৬ জানুয়ারি বুড়িচং থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার বাবা আলা উদ্দিন।
পরবর্তীতে দেবপুর ফাঁড়ি পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় দূর্গাপুর নোয়াপাড়া এলাকার আক্তার হোসেনের গরুর ফার্মের আরেক শ্রমিক মো. নাহিদ হোসেনকে (১৯) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। নাহিদ প্রথমে অস্বীকার করলেও পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, নিহত মনজুরুল ইসলামের টাকা চুরি হওয়ার বিষয় নিয়ে দু’জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে রাতে মনজুরুল ইসলাম ঘুমিয়ে পড়লে নাহিদ তাকে কুপিয়ে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে গরুর ফার্মের পাশের একটি ডোবায় ফেলে দেয়।
ঘাতক নাহিদের বাড়ি রংপুর জেলার তারাগঞ্জ থানার উজিয়াল ডাক্তার পাড়া গ্রামে।
বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ রহমান জানান, ঘাতক নাহিদের দেখানো স্থান থেকে মনজুরুল ইসলামের মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে একজনকে আসামী করে বুড়িচং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নাহিদ পুলিশ হেফাজতে আছে।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.