আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কুল চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। কম পুঁজিতে লাভজনক চাষে ঝুঁকছে শিক্ষিত বেকার যুবকরা। কুলের পাশাপাশি চারা তৈরি করে বিক্রি করায় বাড়তি লাভবান হচ্ছে এসব কৃষক। এক সময় জেলার বাইরে থেকে কুল ও চারা আমদানি করা হলেও বর্তমানে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে জামালপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। কুল বাগানে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে আছে বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী কুল, থাই আপেল কুল, কাশ্মিরি, নুরানি রেড কুলসহ নানা জাতের কুল। দেখতে অনেকটা মাঝারি সাইজের আপেলের মতো। রঙ আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। খেতে অনেক সুস্বাধু ও মিষ্টি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, এবার জেলার প্রায় ৪ শতাধিক কুল চাষি ৩’শ হেক্টর জমিতে কুল চাষ করেছেন। এর মধ্যে সরিষাবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর, মালিপাড়া, ভাটারাসহ বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। বাজারে কুলের চাহিদা ও বাজার দর বেশি থাকায় লাভের আশায় হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে কুল চাষিদের মুখে। লাভজনক কুল চাষে ঝুকছে বেকার যুবক থেকে সাধারণ মানুষরাও। প্রতি বিঘা জমিতে ১৮০ থেকে ২০০টি চারা লাগানো যায়। প্রতি বিঘাতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে বছরে ১ লাখ ৫০ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। প্রথম দিকে পাইকারিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা ধরে কুল বিক্রি হলেও বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে কুল বিক্রি হচ্ছে। বিদেশি জাতের কুল চাষ রৌদ্রউজ্জ্বল উচু জমিতে ভালো হয়। যে বাগানে যত বেশি রোদের আলো লাগে সেই জমির কুল ততো বেশি মিষ্টি হয়।
কুল চাষ নিয়ে কথা হয় জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের শিক্ষিত যুবক রবিউল ইসলাম ও পোগলদিঘা ইউনিয়নের জহুরুল ইসলাম এর সাথে। এ-সময় তারা বলেন, প্রথমে এক বিঘা জমিতে ১শ গাছ লাগিয়ে কুল চাষ শুরু করেন রবিউল ইসলাম। খরচ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় দশ বছরে তিনি গড়ে তুলেছেন ১০ বিঘার বিশাল কুল বাগান। বর্তমানে তার বাগানে বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী, থাইকুলসহ বিভিন্ন জাতের এক হাজার কুল গাছসহ লিচু, পেঁপে ও কলা গাছ। চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত ১ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছেন রবিউল ইসলাম। বাজার দর ভাল থাকলে তিনি আরো দশ লাখ টাকার কুল বিক্রির আশা করছেন।
এ দিকে জহুরুল ইসলাম বলেন, তিনি পেশায় একজন দর্জি। এর মাধ্যমে তিনি জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। করোনা মহামারী সময়ে জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়লে ইউটিউব দেখে কুল চাষ শুরু করেন। প্রথমে বাড়ির পাশে ১৫ শতাংশ জমিতে ২৩টি উন্নত চারা লাগিয়েছিলেন। চাষ শুরুর পর বাগানের ফল ধরেছে আশাতীত। মাত্র ৫-৬ হাজার টাকা খরচ করেছেন বাগানের জন্য। জহুরুল এখান থেকে প্রথম পর্যায়ে অর্ধ লক্ষাধিক টাকার মতো ফল বিক্রি করলেও বর্তমানে সবগুলো গাছে ভাল ফলন হওয়ায় প্রায় দুই লক্ষ টাকার ফল বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন।
তারা দুই জন কুল চাষের পাশাপাশি করেছেন সবজির বাগান ও কুলের কলম চারা তৈরি। এ থেকে বাড়তি আয় হওয়া খুশি তারা। তারা আরো জানান, তাদের কাছ থেকে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই এসব কুলের চারা কিনতে আসছেন। এ সাফল্যে ইতোমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়ায় এলাকার অনেক যুবক কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তারা আরও জানায়, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নিয়মিত বিভিন্ন পরামর্শ পাচ্ছেন। সরকারি ভাবে কুল সংগ্রহ করা হলে আমরা আরও লাভবান হবো।
স্থানীয় হাসান বলেন, রবিউলের কুল বাগান দেখে তারা উদ্ধুদ্ধ হয়েছেন। কুল সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় তার কাছ থেকে কলম চারা নিয়ে তিনি মিশ্র ফল বাগান তৈরি করবেন। তিনি আরও বলেন আগামীতে এই এলাকায় কুল চাষের পরিমান বাড়বে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্মতা ডা: বদরুল হাসান জানান, কুলে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম সহ নানা উপাদান থাকায় শরীরে এগুলো রোগ প্রতিরোধ করে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের পাকা কুল সাবধানে খাওয়াই ভালো।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, জেলায় প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে কুলের চাষ হয়েছে। কুল চাষিদের পরামর্শ ও সহায়তার পাশাপাশি কুল বাগানগুলোকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। প্রতি বছর কুল চাষি বাড়ছে, কোন কৃষক কুল বাগান করতে চাইলে তাকে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। চাষাবাদ করে অনেকে লাভবান হচ্ছেন।
পুুষ্টিকর কুল চাষ বাড়াতে আগ্রহী বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ, কুল চাষের জন্য সরকারি ভাবে অর্থ সহায়তা ও কৃষি বিভাগ আরো বেশি সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে এমন প্রত্যাশা চাষীদের।