চুয়াডাঙ্গা

বিয়ের দিন অন্য মেয়েকে নিয়ে উধাও বর

বিয়ের আসরে বধূ সেজে বসে ছিলেন কনে। গরু-ছাগল জবাই করে বর পক্ষকে আপ্যায়ন করার আয়োজনও ছিল চূড়ান্ত। তবে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়, দুপুর শেষে বিকেল-সন্ধ্যা কিন্তু আসে না বর।

সারাদিনেও বর না আসায় কনে ও কনের বাবা খুবই ভেঙে পড়েন। বিয়ে বাড়িতে যেন শোকের ছায়া নেমে আসে। বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানতে পেরে বরের পরিবারকে জরিমানা করেন। পরে সেই জরিমানার টাকা কনের বাবার হাতে তুলে দেন স্থানীয় পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম জাকারিয়া আলম।

তবে এরপর যা ঘটেছে তা বিরল। কনের বাবা সেই টাকা গ্রহণ না করে গ্রামের অসহায় বা দুস্থ পরিবারের কোনো বিবাহ উপযুক্ত মেয়ের বিয়েতে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সেই উদ্দেশ্যে তিনি টাকাগুলো চেয়ারম্যানের কাছে আমানত হিসেবে রেখে দিয়েছেন।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই লাখ টাকা কনের বাবার হাতে তুলে দেয় বরের পরিবার। এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি বিয়ের দিন ধার্য থাকলেও বিয়েতে আসেননি বর। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত বরের নাম হুসাইন। তিনি একই উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী ওমর ফারুকের ছেলে।

কনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, দেখাদেখির পর দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। দেনমোহর ধার্যও হয় ৭৫ হাজার টাকা। এর দুদিন আগে ছেলে ও তার পরিবারের সদস্যরা মেয়ের নাকে নাকফুল পরিয়ে দিয়ে আসেন। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০-২৫ জন সহযাত্রীসহ বিয়ে করতে আসার কথা ছিল বরের। সব আয়োজন শেষ করে প্রতীক্ষায় ছিল কনের পরিবার। কিন্তু শেষমেশ বিকেলে কনেপক্ষের লোকজন জানতে পারেন, গ্রামের অন্য একটি মেয়েকে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন বর হুসাইন। এতে নিমেষেই বিয়েবাড়ির আনন্দ ম্লান হয়ে যায়।

বিয়েতে না আসায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে বরের বাবাকে সালিশে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ক্ষতিপূরণের টাকা কনের বাবার হাতে তুলে দেন অভিযুক্ত বরের পরিবার ও পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম জাকারিয়া আলম। তবে কনের বাবা প্রাপ্ত টাকা গ্রহণ না করে গ্রামের অসহায় বা দুস্থ পরিবারের কোনো বিবাহ উপযুক্ত মেয়ের বিয়েতে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সে উদ্দেশ্যে তিনি টাকাগুলো চেয়ারম্যানের কাছে আমানত হিসেবে রেখে দিয়েছেন।

কনের মামা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, কথা পাকাপাকির পর কনের বাবা তার শেষ সম্বল দুটি গাভি বিক্রি করে আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত দিয়ে বিয়ের আয়োজন করেন। মেয়ের সুখের জন্য ছেলের দাবি করা এক সেট গয়না কেনেন এবং বরের জন্য একটা পালসার মোটরসাইকেল কেনারও প্রস্তুতি নেন। সব আয়োজন করে বিয়ের দিন বরপক্ষের অপেক্ষায় ছিল কনের পরিবার। কিন্তু সারাদিন পার হলেও আসেননি বর ও বরপক্ষের কেউ।

পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম জাকারিয়া আলম বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তবে মেয়ের বাবা ক্ষতিপূরণের টাকা আমানত হিসেবে রেখেছেন। কোনো গরিব পরিবারের মেয়ের বিয়ের জন্য তিনি টাকাটা খরচ করতে চান। এর মাধ্যমে কনের বাবা বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।

এ বিষয়ে কনের বাবা নিজের নাম-ঠিকানা গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘আমার মেয়েকে বিয়ে না করায় আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমার মেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এতে আমার তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মর্যাদাহানির হিসাব করলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক। ওই টাকা দিয়ে আমার ক্ষতি পোষাবে না। তাই আমি ওই টাকা আমার জন্য খরচ করতে চাই না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker