ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় পরীক্ষা চলাকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করা সেই ছাত্রলীগ নেতা মনির হোসেন সুমন মহিষ চুরির মামলায় আদালতের চার্জশিটভুক্ত আসামি।
রোববার (১০ এপ্রিল) রাতে এ তথ্য পাওয়া যায়। বর্তমানে মামলাটি ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন। আগামী ২৭ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত আছে। তবে এ মামলায় জামিনে রয়েছেন মনির হোসেন।
মামলার আসামি উপজেলার শিবনগর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে মনির হোসেন। তিনি একই উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কোটচাঁদপুর উপজেলার গুড়পাড়া গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিনের গোয়ালঘর থেকে গত ২০২০ সালের ১৬ জুন রাতে দুটি মহিষ চুরি যায়। এ ঘটনায় ১৮ জুন ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে কোটচাঁদপুর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়। পরে কালীগঞ্জের চাচড়া এলাকা থেকে একটি ও একই গ্রামের সেলিম হোসেনের বাড়ি থেকে আরেকটি মহিষ উদ্ধার করা হয়। ২০২০ সালের ২৭ জুন কোটচাঁদপুর থানায় সেলিম হোসেনসহ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন ভুক্তভোগী নাসির উদ্দিন।
এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোটচাঁদপুর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক তৌফিক আনাম কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও শিবনগর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে মনির হোসেন সুমনসহ তিনজনকে পলাতক ও দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে পলাতক আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে। এরপর চার্জশিটভুক্ত ৫ আসামিই জামিনে বেরিয়ে আসেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বর্তমানে শৈলকুপা উপজেলার হাটফাজিলপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ তৌফিক আনাম বলেন, আমরা যখন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিই তখন ঘটনার সত্যতা তো কিছু অবশ্যই ছিল। আমি পাঁচজনের নামেই আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিলাম। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন। আদালতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
মামলার বাদী কোটচাঁদপুর উপজেলার গুড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন, আমার মহিষ চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছিল। সেই মামলার আসামি ছাত্রলীগ নেতা মনির হোসেন সুমন কালীগঞ্জের ও কোটচাঁদপুরের নেতাদের এনে বারবার মামলা তুলে নিতে বলছিল।
তিনি আরও বলেন, আমি একটু ভয়ে তো ছিলামই। তবে ঘটনা যাই হোক আমার মহিষ চুরি হলো। আমি তো অবশ্যই জড়িতদের শাস্তি চাই। আদালত যেন সঠিকভাবে বিচার করে সেই প্রত্যাশা আমার।
২০২০ সালের মহিষ চুরির ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা মনির হোসেন সুমন জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে সেসময় ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তৎকালীন (বর্তমানে বিলুপ্ত কমিটি) জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রানা হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আওয়াল।
সদ্য বিলুপ্ত কমিটির জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রানা হামিদ বলেন, সেসময় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের তদন্ত কমিটি ঘটনার তদন্ত করেছিল। তবে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সেটি বলেননি তিনি।
এ বিষয়ে নিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শনিবার (৯ এপ্রিল) কমিটি বিলুপ্ত মনির হোসেন সুমনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইলফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে পরীক্ষার হলে লাইভ করার ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হলে গতকাল শনিবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ দেখিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৮ এপ্রিল) দেশব্যাপী কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও গ্রাফিকস ডিজাইন বিষয়ে ৬ মাস ও ৩ মাস মেয়াদি কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কালীগঞ্জ উপজেলার প্রিজম কম্পিউটার একাডেমির একজন পরীক্ষার্থী হিসেবে মনির হোসেন সুমন পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা চলাকালে মনির হোসেন সুমন নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লাইভ শুরু করেন। এ সময় সেখানে তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তা বলেন।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.